পিবিএ,জামালপুর: সাংবাদিক শেলু আকন্দের ওপর ভূমিদস্যু পৌর কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান রুনুর ছেলে ও সহযোগীদের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন জামালপুর জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা। ২২ ডিসেম্বর রোববার দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া হয়।
অব্যাহত আন্দোলনের ৪র্থ দিনে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, দেওয়ানপাড়ার মৃত হুরমুজ আলী খানের ছেলে জামালপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান রুনু (৫৫) এক সময়ের কসাই থেকে বর্তমানে ভূমিদস্যু। হাসানুজ্জামান খান রুনু জামালপুর সদর সাব রেজিস্টার অফিসের স্ট্যাম্প ভেন্ডার হবার সুবাদে ভুয়া জমা-খারিজ ও পর্চা তৈরির মাধ্যমে বানোয়াট দলিল সম্পাদন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অংকের টাকা।
২৮ মে দুপুর ২টায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মোস্তফা মনজু ভুয়া পর্চা ও জমা-খারিজ মূলে সম্পাদিত একটি দলিল জব্দ হবার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাব রেজিস্টার অফিস চত্ত্বরে হাসানুজ্জামান খান রুনুর নেতৃত্বে ওই সাংবাদিককে মারধর করেন সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ২৮ মে তারিখেই জামালপুর সদর থানায় মামলা করেন ওই সাংবাদিক। মামলা নং-৭৭। মামলার আসামিরা সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিলে নিরাপত্তার জন্য জামালপুর সদর থানায় জিডি করেন শহরের ৪৮জন সাংবাদিক। বিষয়টি অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেটকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাবার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
মোস্তফা মনজুর করা মামলায় সাক্ষী ছিলেন শেলু আকন্দ। এই আক্রোশেই ১৮ ডিসেম্বর বুধবার ওই কাউন্সিলরের নির্দেশে শেলু আকন্দের ওপর হামলা চালায় ছেলে রাকিব খান ও সহযোগীরা। হামলাকারীরা লোহার রড, হাঁতুড়ি ও শাবল দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে শেলু আকন্দের দুই পা ভেঙে দেয়। ওইদিন রাতেই শেলু আকন্দকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর শেলু আকন্দের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে হাসানুজ্জামান খান রুনু, ছেলে রাকিব খানসহ ৬জনকে আসামি করে জামালপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার ২ নম্বর আসামি রাকিব খান গ্রেফতার হলেও বাকি আসামিদের ধরতে পারেনি পুলিশ।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, কালের কন্ঠের সাংবাদিক মোস্তফা মনজুর ওপর হামলা মামলার ঘটনার জের ধরে দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিক শেলু আকন্দের ওপর বর্বরোচিত হামলায় কর্মরত সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই হামলা সকল সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
স্মারকলিপিতে যেসব দাবি জানানো হয়েছে তা হলো-
১. হাসানুজ্জামান খান রুনুসহ মামলার সকল আসামিকে গ্রেফতার করতে হবে।
২. পৌরসভার কাউন্সিলরের পদ থেকে হাসানুজ্জামান খান রুনুকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।
৩. হাসানুজ্জামান খান রুনুর স্ট্যাম্প ভেন্ডার সনদ বাতিল করতে হবে।
৪. ভুয়া জমা-খারিজ মূলে দলিল করার জন্য হাসানুজ্জামান খান রুনুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. সকল সাংবাদিকের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
৬. হাসানুজ্জামান খান রুনুর অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তদন্ত এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পিবিএ/রাজন্য রুহানি/এমএসএম