‘মিস্টার মোদি, আই অ্যাম ইন্দুলেখা

পিবিএ ডেস্ক : একজন ইন্দুলেখা পার্থান। মাত্র ১৮ বছর বয়সী আইনশাস্ত্রের একজন ছাত্রী। তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী নন, নন কোন নেতা। কিন্তু তিনিই ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। চারদিক থেকে পাচ্ছেন শত শত অভিনন্দন বার্তা ও ফোনকল। তার মধ্যে রয়েছেন একজন সাবেক এমপি। তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়া হিট করেছে। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং এনআরসির প্রতিবাদে ভারতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে স্পৃহা ছড়িয়ে পড়েছে, যে বিক্ষোভ হচ্ছে, তার অনেক ছবির মধ্যে দৃষ্টি কেড়েছে ইন্দুলেখার ছবি।

এর কারণ তিনি প্রতিবাদ বিক্ষোভে পরেছিলেন একটি বোরকা এবং একটি হিজাব। তার হাতে ছিল একটি প্লাকার্ড। তাতে ইংরেজিতে লেখা ‘মিস্টার মোদি, আই অ্যাম ইন্দুলেখা। আইডেনটিভাই মি বাই মাই ড্রেস?’ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী মোদি, আমি ইন্দুলেখা। আপনি কি আমাকে আমার পোশাক দিয়ে সনাক্ত করবেন? এ খবর দিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক অনলাইন টেলিগ্রাফ।

গত সপ্তাহে ঝাড়খন্ডে প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সহিংসতা করছে তাদেরকে পোশাক দিয়ে চিহ্নিত করা হবে। ফলে ইন্দুলেখা যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তা মোদির প্রতি একটি সরাসরি বার্তা। ইন্দুলেখা কেরালার আরনাকুলামে গভর্নমেন্ট ল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি কোনোই রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য নন। তা সত্ত্বেও তিনি নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু বোরকা পরে, হিজাব পরে। এ ধারণা কিভাবে পেয়েছেন সে সম্পর্কে ইন্দুলেখা জানিয়েছেন, বুধবার অন্য ১৪টি কলেজের সঙ্গে আরনাকুলায় পরিকল্পিত তিন কিলোমিটার প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন তারা।

এ সম্পর্কে তিনি রোববার ভারতের দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, সিনিয়র শিক্ষার্থী ভাইবোনরা আমাদের ক্লাসে গিয়েছিলেন। তারা জানতে চেয়েছিলেন আমাদের ভিতর কেউ কি কড়া প্রতিবাদের কোনো ধারণা দিতে পারি কিনা। আমার এই পোশাকের বিষয়ে আমি তাদেরকে ধারণা দিই। সঙ্গে সঙ্গে তারা আমার ধারণাটি গ্রহণ করেন। সিনিয়ররা অবিলম্বে সব কিছু আয়োজন করেন। তারা আমার পোশাক ও প্লাকার্ড তৈরি করে দেন। সেই পোশাক পরেই আমি বিক্ষোভে যাই। হাতে ধরি সেই প্লাকার্ড।

এর পর পরই ইন্দুলেখার ওই ছবি সবচেয়ে বেশি শেয়ার হতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ইন্দুলেখা বলেন, আমি যেহেতু কাউকে অবমাননা করার চেষ্টা করছি না, তাই আমি কোনো কিছু থেকে ভীত নই। আমি শুধু পোশাক ও একটি প্লাকার্ডের সাহায্যে আমার মনের কথা বলতে চেয়েছি। ইন্দুলেখার কাছ থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে পালাক্কাড়ে বসবাস করেন তার পিতামাতা পার্থান ও প্রসন্ন। তারা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তাদেরকে অভয় দিয়েছেন ইন্দুলেখা।

বলেছেন, আমি তাদেরকে বলে দিয়েছি, মানহানিকর কোনো কিছু আমি করছি না। আমার যে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে তা আমার সহপাঠীদের তোলা। এটা কোনো প্রপাগান্ডা সৃষ্টি করার মানসে ব্যবহার করা হয় নি। তবে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। ইন্দুলেখা আরো বলেছেন, তার এমন ভূমিকার কারণে পালাক্কাড়ে অবস্থিত গভর্নমেন্ট ময়ান মডেল গার্লস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সাবেক শিক্ষকরা তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। আমার আত্মীয়রা আমাকে নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। তা সত্ত্বেও তারা আমাকে প্রশংসা করেছেন।

তবে যে শুধুই প্রশংসা পেয়েছেন ইন্দুলেখা, তা নয়। তাকে অসন্তোষজনক মন্তব্যও শুনতে হয়েছে। এ সম্পর্কে ইন্দুলেখা বলেন, যারা আমাকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। অন্যদিকে নেতিবাচক যারা তাদেরকে জাস্ট অবজ্ঞা করেছি। কলেজের সহপাঠী ও সিনিয়ররা তাকে যে অভিনন্দন জানিয়েছেন, জানাচ্ছেন, তা খুব উপভোগ করছেন ইন্দুলেখা ।

তিনি বলেন, যেহেতু আমি কোন ছাত্র ইউনিয়নের অংশ নই, তাই ক্যাম্পাসে আমাকে হাতেগোনা দু’চারজন চিনতো। কিন্তু বুধবারের পরে সিনিয়ররা পর্যন্ত আমার কাছে আসছেন এবং অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ইন্দুলেখাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন পালাক্কাড়ের সাবেক এমপি ও সিপিএম নেতা এমবি রাজেশ। এ সম্পর্কে ইন্দুলেখা বলেন, ওই ফোনকলটির কথা আমি চিরদিন স্মরণ রাখবো। কারণ, স্কুলে এক বার্ষিক অনুষ্ঠানে একজন ছাত্রী নেত্রী হিসেবে আমরা একই মঞ্চে উঠেছিলাম। ওদিকে ইন্দুলেখার প্রকাশকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দলের জন্য একটি শক্তিাশালী বার্তা বলে অভিহিত করেন এমবি রাজেশ।

পিবিএ/জেডাই

আরও পড়ুন...