উত্তরায় নির্মাণাধীন বিজিএমইএ ভবন
পিবিএ,ঢাকা : বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আর সময় চাইবে না বলে সংশোধিত মুচলেকা জমা দেয়ার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ভবনটি ভাঙার জন্য ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেন। ওই সময়ের মধ্যে বিজিএমইএ তাদের উত্তরার ভবনে উঠে যাবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু বিধি বাম। বিজিএমই’র উত্তরার নির্মানাধীন ভবন পরিদর্শন করে দেখা গেছে যে, ১২ এপ্রিলের মধ্যে ওই ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পিবিএকে বলেন, ‘ঠিক বলেছেন। উত্তরার ভবনের কাজ শেষ হতে বেশ সময় লাগবে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেখানে শিফট করা সম্ভব হবে না।’ তাহলে ১২ এপ্রিলের পর সংগঠনটির কর্মকাণ্ড কোন ভবন থেকে পরিচালিত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ভবন থেকেই পরিচালিত হবে। আমাদের কমপক্ষে পাঁচশ’ কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছে। এদের নিয়ে আমরা কোথায় যাবো? আমরা এই ভবনেই থাকবো এবং নতুন ভবন নির্মাণ হলে ওখানে চলে যাবো।’ এক্ষেত্রে আদালতের আদেশের বিষয়টির কিভাবে সুরাহা করবেন প্রশ্নে তিনি পিবিএকে বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান এটা। পাশাপাশি, আমরা সরকারেরও অনেক কাজ করি। এমতাবস্থায় আমাদের এরকম বিপত্তিকর অবস্থায় অবশ্যই সরকার আমাদের সহযোগিতা করবেন। এক্ষেত্রে আমরা ফের সময় চেয়ে আবেদন করবো। আশাকরি, আমাদের বাস্তবতা সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারবেন।’
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে সর্বশেষ আদেশে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘এবার যেন বাস্তবায়ন হয়, ১২ মাস ১০ দিন সময় পাচ্ছেন এটি মনে রাখবেন। আদালতের এ আদেশের ফলে বিজিএমইএ ১৬তলা পেল।’ আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে মুচলেকা জমা দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
উত্তরায় নির্মাণাধীন বিজিএমইএ ভবন
পরে ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত আমাদের মুচলেকা গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে ভবন ভাঙতে আমাদের ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত এক বছর ১০ দিন সময় দিয়েছেন।’ ২০১৭ সালের ৫ মার্চ বহুতল ভবনটি ভাঙতে আরও এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২৫ মার্চ বিজিএমইএর আবেদনের ওপর শুনানি শেষ করে ২৭ মার্চ আদেশের দিন নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। এদিন আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বিজিএমইএর আইনজীবীকে বলেন, ‘ভবন কতদিনের মধ্যে ভাঙবেন, সে বিষয়ে মুচলেকা দিতে হবে। অন্যথায় কোনো সময় আবেদন গ্রহণ করা হবে না। বারবার সময় আবেদন করেন, এতে আমাদেরই লজ্জা লাগে।’ আদালত বলেন, সময় আবেদনের বিষয়ে মুচলেকা দেয়ার পরেই আদেশ দেয়া হবে। ২৮ মার্চ শেষবারের মতো এক বছরের সময় চেয়ে লিখিত মুচলেকা দেয় বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালনা পরিষদ। লিখিত মুচলেকায় বলা হয়, ‘এরপর আমরা আর সময় চাইব না।’ তবে সময় না চাওয়ার শর্ত স্পষ্ট না থাকায় মুচলেকাটি সংশোধন করে পুনরায় জমার নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে আদেশের দিন নির্ধারণ করেন আদালত। সংশোধিত মুচলেকা জমা দেয়ার পর আদালত আদেশ দেন।
উত্তরায় নির্মাণাধীন বিজিএমইএ ভবন
উল্লেখ্য, জলাধার আইন ভেঙে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে ‘একটি ক্যান্সার’ আখ্যা দিয়ে একে ভেঙে ফেলার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ আপিল বিভাগ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন। তখন ভবন ভাঙতে কত দিন সময় লাগবে তা জানিয়ে আবেদন করতেও নির্দেশ দেন আদালত। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন সরাতে তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করেন। এরপর ওই বছরের ১২ মার্চ আপিল বিভাগ আবেদন নিষ্পত্তি করে ভবন সরাতে ছয় মাস সময় দেন। এরপর বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ফের আবেদন করলে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর ভবন ভেঙে ফেলতে পোশাক রফতানিকারকদের এ সংগঠনকে আরও সাত মাস সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। দ্বিতীয় দফায় পাওয়া ওই সময়সীমা ১১ এপ্রিল শেষ হবে। তবে এর আগেই তৃতীয় দফায় আবেদন করে ভবন ভাঙতে আরও এক বছর সময় পায় বিজিএমইএ।
পিবিএ/জিজি