পিবিএ ডেস্ক: জনসংখ্যার ঋণাত্মক বৃদ্ধি হার অচিরেই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা রোসস্ট্যাটের হিসাব অনুযায়ীই, রুশ ফেডারেশনের জনসংখ্যা প্রতি বছর আড়াই লাখেরও বেশি কমছে। অর্থাৎ প্রতি দিন ৭০০ জন করে মানুষ কমছে দেশটির। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান মৃত্যুহার, জনমিতিতে বয়স কাঠামোয় পরিবর্তন, কঠোর অভিবাসন নীতি এবং ওষুধপত্র ও সার্বিক চিকিৎসা অবকাঠামোর সঙ্কটের কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলেও শিগগিরই রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
একাধিক রুশ বিশ্লেষক জনসংখ্যার বর্তমান ঋণাত্মক ধারাকে ভবিষ্যতের বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করছেন। নিদেনপক্ষে রাশিয়ার সামরিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে উঠবে বলে তাদের মত। রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, জনসংখ্যার এ হ্রাসমান প্রবণতার পেছনে কিছু সরকারি নীতির ভূমিকা রয়েছে। যেমন, হাসপাতালের সংখ্যা হ্রাস, ওষুধ আমদানিতে বিধিনিষেধ, অভিবাসন বন্ধ রাখা, রুশদের দেশত্যাগের প্রবণতা বৃদ্ধি এবং অ্যালকোহল ও খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে সরকারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা বা কার্যকর না হওয়ার কারণে মৃত্যু হার জন্মহারকে অতিক্রম করেছে।
অবশ্য বিশ্লেষকদের এ পর্যবেক্ষণকে বিবেচনায় নিচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিন সরকার। প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ ২০১৮ সালে ঘোষণা দেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই ঋণাত্মক প্রবণতার সমস্যার সমাধান করাই পরের বছরের বাজেটে অগ্রাধিকার পাবে। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ সমস্যাটি রাতারাতি তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিনের সরকারি নীতির কারণে জনসংখ্যা পরিস্থিতি এমন হয়েছে। এর সমাধানেও দীর্ঘ সময় লাগবে। সমস্যাগুলো শিগগিরই বিবেচনায় নিয়ে কার্যকরভাবে সমাধান করা না গেলে রাশিয়ার জনসংখ্যা চলতি শতকের মাঝামাঝিতে দশ কোটিরও বেশি কমে যেতে পারে। যেখানে বর্তমানে রাশিয়ার জনসংখ্যা (ক্রাইমিয়া বাদে) ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৪ জন।
রাশিয়ার জনসংখ্যামিতিক ‘বিপর্যয়ের’ এ চিত্র তুলে ধরেছে সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা রোসস্ট্যাট। তাদের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৮ সালের প্রথম সাত মাসে রাশিয়ায় ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯০০টি শিশুর জন্ম হয়, যা ২০১৭ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪০ হাজার কম। একই সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ হাজার বেড়ে ১০ লাখ ৯৯ হাজার হয়েছে। সে হিসাবে ওই বছর রাশিয়ায় জন্মের চেয়ে মৃত্যু ১ দশমিক ২ গুণ বেশি।
কিছু অঞ্চল, বিশেষত যেসব অঞ্চলে নৃগোষ্ঠীদের বাস সেখানে জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য আরো বেশি। তবে উত্তর ককেশাসে মুসলিমপ্রধান এলাকাগুলোতে জনসংখ্যা বৃষ্টি হার ইতিবাচক। কারণ সেসব এলাকায় প্রজননক্ষম নারীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
তবে সোভিয়েত আমল থেকেই মস্কো শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসের চেষ্টা করেছে। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্যও অর্জন করেছে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে গত এক দশকের মধ্যে জন্মহার বেশ বেড়েছে। চলতি বছর জনসংখ্যা ১৩ কোটি ৮০ লাখ থেকে ১৩ কোটি ৯০ লাখের মধ্যে স্থিতিশীল রাখার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে রুশ সরকার। ২০২৫ সাল নাগাদ জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পিবিএ/এমএসএম