ইজতেমার সকল প্রস্তুতি শেষ, মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছে (ভিডিওসহ)

https://youtu.be/4Oqc9wbgIS8

শতাব্দী আলম, পিবিএ, টঙ্গী : ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার জন্য প্রস্তুত তুরাগ তীরবর্তী টঙ্গী ইজতেমা ময়দান। মুরব্বীদের ভাষ্য, ইজতেমার ইতিহাসে এবারই সর্বোৎকৃষ্ট এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। পরের সপ্তাহে মাওলানা সাদের অনুসারীরা দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা পালন করবেন।

ইজতেমা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ১০০ টিরও বেশী দেশের লাখ লাখ মুসলিম নর-নারী বিশ্ব ইজতেমায় আসেন। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরের মতই দেশ বিদেশের আগত মুসল্লিদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিতে সবরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেয়র আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম স্বয়ং সব কাজের তদারকি করেন। তিনি তাবলিগের মুরব্বীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।


ইজতেমা ময়দান সরজমন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ইজতেমায় আগত লাখো মুসল্লি যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে বয়ান শুনতে পারেন সেজন্য পুরো ময়দানে প্রায় ২’শ ৫০টি ছাতা মাইক স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশি মেহমানদের কামরায় প্রায় ৫০টি ধ্বনি প্রতিরোধক ইউনিসেফ মাইক স্থাপন কার্যক্রম শেষ।

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে তুরাগ নদের উপর ৭টি ভাসমান পন্টুন সেতু নির্মাণ করেছেন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা।


বিশ্ব ইজতেমায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ১৬০টি, র‌্যাবের পক্ষ থেকে ৯০টি, এসবি ঢাকার পক্ষ থেকে ৫০টি সিসি ক্যামারা লাগানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির অংশ হিসাবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ১৫টি ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো.আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, প্রায় ৮ হাজার পুলিশ সদস্য মোট পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত থাকবে।

ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বিশেষ অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ৩টি পানিবাহি গাড়ি, ৩টি এ্যাম্বুলেন্স, ১টি টু-হুইলার টহল গাড়ি, ২টি ডুবুরী দল, ৯০টি খিত্তায় ২জন করে ফায়ার ম্যান, ২টি ফায়ার এক্সিট্রিম হুইসার, ১টি ফায়ার বিটা, তুরাগ নদে একটি ফায়ার বোটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইজতেমার উত্তর দিকে সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ, র‌্যাব, জেলা প্রশাসন অস্থায়ী কন্ট্রোল কক্ষ নির্মাণ করেছে।


ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে গাজীপুর সিভিল সার্জন ও টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে বিশেষ চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য ৩ কেটি ৫৫ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি এবং ময়দানের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।


তাছাড়া এবরোথেবরো ময়দান বালু ফেলে সমান করা হয়েছে। অতিরিক্ত প্রায় দেড় হাজার শৌচাগার নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। ময়দানের প্রতিটি বাশের খুটিতে বৈদ্যুতিক বাল্বতো আছেই মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। আধুনিক গ্যাসের চুলা স্থাপন করা হয়েছে। হাজার হাজার মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানে কাজ করছেন। রশি ও পাটের চট দিয়ে সামিয়ানা তৈরির কাজ, ছাতা মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন, মুক্কাবির মঞ্চ তৈরি, খুঁটি নম্বর ও খিত্তা নম্বর বসানো, বালি ফেলে উচুঁ নিচু জায়গা সমান করাসহ ময়দান পরিষ্কারের কাজ করছেন।


গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সারা বছর দেশ বিদেশে ঘুরে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন। দাওয়াতী কার্যক্রমের তালিম নিতে প্রতিবছর টঙ্গীতে তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহন করেন তারা। দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির সেবায় সিটি কর্পোরেশনের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। আল্লাহর রাজিখুশি এবং মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তিনি এইসব আল্লাহর মেহমানদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...