ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণ : ৫শ টাকায় মোবাইল বিক্রি করেই ধরা পড়লেন ধর্ষক মজনু

পিবিএ, ঢাকা : রাজধানীর কুর্মিটোলায় সড়কের পাশে ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের এলাকার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না থাকা সত্ত্বেও দু’দিনের মাথায় ধর্ষক মজনুকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার মজনু একজন মাদকাসক্ত ও সিরিয়াল রেপিস্ট। তিনি ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধী-ভিক্ষুক নারীদের ধর্ষণ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। তিনি নিজেকে দিনমজুর হিসেবে দাবি করলেও ছিনতাই ছিল তার নিয়মিত পেশা।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ঘটনার দিন ঢাবি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসে করে শেওড়া বাসস্ট্যান্ড নামার কথা থাকলেও ভুলক্রমে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যান। ধর্ষক মজনু কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছিলেন। যখন ওই শিক্ষার্থী কুর্মিটোলা থেকে ফুটপাত ধরে শেওড়ার দিকে যাচ্ছিলেন তখন মজনু তাকে জাপটে ধরে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যান।

তিনি বারবার ওই শিক্ষার্থীকে কিল-ঘুষি মারছিলেন আর গলা চেপে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। মজনু ওই শিক্ষার্থীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। ওই শিক্ষার্থীও এর মধ্যে কয়েকবার চেতনা হারিয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে চেতন ফিরলে ধর্ষককে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

এরপর ধর্ষক মজনু মোবাইল-পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনের দিকে চলে যান। সেখানে অরুণা বিশ্বাস নামে একজনের কাছে শিক্ষার্থীর মোবাইলটি ৫শ টাকায় বিক্রি করেন। এর মধ্যে ৪শ টাকা নিয়ে ট্রেনে করে বিমানবন্দর চলে যান, এরপর ট্রেনে করে নরসিংদী চলে যান। সেখানে রাতে গিয়ে স্টেশনে ঘোরাফেরা করেন। পরদিন সকালে আবার ট্রেনে বনানী স্টেশনে চলে আসেন। তখন থেকে ওখানেই অবস্থান করছিলেন।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) কুরাতলী থেকে খায়রুল ইসলাম নামে একজনের কাছ থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। এরপর তিনি জানান মোবাইলটি অরুণা বিশ্বাস নামে একজন তাকে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী অরুণা বিশ্বাসকে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় মজনু তার কাছে মোবাইলটি বিক্রি করেছেন। তখন অরুণার কাছ থেকে মজনুর শারীরিক বিবরণ এবং ভিকটিমের বর্ননা মিলে যাওয়ায় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় সেই ধর্ষক।

এরপর অভিযান আরো জোরদার করলে গোয়েন্দা তৎপরতায় অবশেষে বুধবার ভোরে শেওড়া রেলক্রসিং থেকে মজনুকে গ্রেফতার করা হয়। মজনু গ্রেফতারের পরই ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন এবং ভিকটিমকে মজনুর ছবি দেখালে তাকে শনাক্ত করেন।

‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু বিভিন্ন সময় ধর্ষণের কথা অকপটে স্বীকার করেন। তবে এসব বিষয়ে ছিলেন পুরোপুরি নির্বিকার। কয়েকবার ভিকটিমকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে ভাগ্য ভালো, আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।’

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ভিকটিম অজ্ঞান হলেও কোনো ক্লোরোফরম বা চেতনানাশক কিছু ব্যবহার করেননি বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তার কাছে কোনো ধরনের অস্ত্র পাইনি, এ ধরনের কথাও তিনি জানাননি।

ঘটনার পর থেকে র‌্যাব-১ সহ একাধিক টিম টানা কাজ করে ধর্ষককে শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। মামলাটি যেহেতু ডিবির কাছে রয়েছে, আসামিকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আরও পড়ুন...