বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন

ইজতেমায় লাখো লাখো মুসল্লি একসাথে জুম্মার নামাজ আদায়


এস,এম,মনির হোসেন জীবন,পিবিএ, টঙ্গী : রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের টঙ্গীর কহর দরিয়া তুরাগ নদীর তীরে প্রথম পর্বের তিন দিন ব্যাপী বিশ্বইজতেমা আজ শুক্রবার (১০) জানুয়ারি বাদ ফজর বিশেষ আ’ম বয়ানের মধ্য বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

শুক্রবার ছিল প্রথম পর্বের তিন দিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন। সে কারণে ইজতেমা ময়দানে লাখো লাখো মুসল্লি পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায় করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

আগামী রোববার (১৩ জানুয়ারি) প্রথম দফার ইজতেমার আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একটানা চার দিন বিরতী দিয়ে আগামী শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) অনুরূপ ভাবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্বইজতেমা শুরু হবে।

একই ভাবে রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে সারা বিশ্ব মুসলিম জাহানের সুখ, শান্তি, মঙ্গল, অগ্রগতি, কল্যাণ, ভ্রাতিত্ববোধ কামনা করে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে চলতি বছরের ৫৫তম বিশ্বইজতেমা শেষ হবে।

এদিকে,আজ শুক্রবার টঙ্গী তুরাগ তীরে সূরায়ে নেজামে পন্থী ওলামাদের তত্বাবধানে প্রথম পর্বের তিন দিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা বাদ ফজরের নামাজের পর আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এসময় বংলাদেশ,পাকিস্তান, ভারত, দিল্লির শীর্ষ বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বিরা বয়ান করেন।

পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায় করতে মুল্লিদের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমার মাঠে তাবলিগ জামাত কর্মী সহ সর্বস্তরের মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। নামাজ শুরু হওয়ার আগেই সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বানের স্রোতের মতো মাঠের দিকে ছুঁটতে থাকে। মাঠের ভেতওে ও বাহিরে খোলা জায়গাসহ আশপাশের সবস্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এসময় অনেকে মাঠে স্থান না পেয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সড়ক-মহাসড়ক, তুরাগ নদের ভাসমান ব্রিজও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ কয়েকটি সড়ক জুম্মার নামাজের আগে আশপাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে জুমার জামায়াত শুরু হয় হয়ে শেষ হয় ১টা ৫৫ মিনিটে। ১০ মিনিট পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়। নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম ক্বারী জোবায়ের। জুম্মার নামাজ শেষে বিশ্বের সকল মুসলিমের আত্মশুদ্ধি, দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি লাভের আশায় মুসল্লিরা দোয়া করেন।

এদিকে, আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ভোর থেকে গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ টঙ্গী এসেছেন বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজ আদায় করার জন্য। ঢাকা থেকে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অনেক ‘ভিআইপি’ অতিথিরাও শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে ইজতেমা ময়দানে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা আয়োজকরা।

ইজতেমাস্থলে বয়ান মঞ্চ থেকে মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে আরবি, বাংলা, উর্দু,ফারসি,মালে ইংরেজী সহ কমপক্ষে ১০টি ভাষায় তা তরজমা করে শোনানো হচ্ছে ময়দানে আগত ধর্মপ্রাণ লাখো লাখো মুসল্লিদের। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে নানা বয়সী মুসলমানদের টঙ্গীমুখী ঢল শুরু হয় বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে।


পুলিশ ও র‌্যাব সুত্রে জানা যায়, ইজতেমাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাত স্তরে কাজ করছেন পুলিশের প্রায় ৮ হাজার সদস্য। পুরো ইজতেমার মাঠ ঘিরে সক্রিয় র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, গোয়েন্দা সংস্থা (এসবি এএনআই,ডিজিএফআই) ও আনসার সদস্যরা। আর এবার পুরো ইজতেমাকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৬৪ জেলার লোকজনকে খিত্তা অনুসারে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের নিজস্ব ১৬টি ওয়াচ টাওয়ারসহ র‌্যাবের নিজস্ব ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো ইজতেমা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ইজতেমা মাঠের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশের হোন্ডা টিমসহ সাদা পোশাকের পুলিশও কাজ করছে। তুরাগ নদেরও কয়েক জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের সদস্যরা।

র‌্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল আজ বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ১০-১২ এবং ১৭-১৯ তারিখ পর্যন্ত দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য প্রাক গোয়েন্দা নজরদারি, ইজতেমার সময় ফুল ডেপ্লয়মেন্ট এবং শেষেও মুসল্লিরা স্থান ত্যাগ পর্যন্ত আমাদের ‘কভার্ড অ্যান্ড ওভার্ড’ ফোর্স মোতায়েন থাকবে।


তিনি আরও বলেন, ১০টি অবজারভেশন পোস্ট থেকে পুরো এলাকায় নজরদারি থাকবে। কার-বাইক পেট্রোলিংয়ের পাশাপাশি তুরাগ নদীতে বোট পেট্রোলিং থাকবে। ইজতেমার মাঠে ২০টি প্রবেশপথে আর্চওয়ের মাধ্যমে প্রত্যেককে তল্লাশি করা হচেছ।

গাজীপুর পুলিশের উওর জোনের সার্জেন্ট নাজমুল হাসান বলেন, এবার ইজতেমায় মুসল্লিদের জমাযত গতবারের তুলনায় বেশি। টঙ্গী রোডে ইজতেমা আগত যানবাহনের চাপ বাছে। সারা দেশ থেকে এখানে মুসল্লিরা আসছেন। বৃহস্পতিবার সারা দিন যানবাহনে করে মানুষ এসেছে। আজকেও অনেক মানুষ আসছে। এখানে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

পিবিএ/জীবন/ জেডআই

আরও পড়ুন...