পিবিএ,ডেস্ক: কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতবাসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আটক ২০৯ শ্রমিকদের মধ্যে ১৫৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে কুয়েত সরকার। আটক অন্য শ্রমিকদের মুক্তির ব্যাপারে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানানো হয়।
বুধবার কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রধান মো. আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৭ জানুয়ারি দূতাবাসে হামলার ঘটনায় আটক ২০৯ শ্রমিকদের মধ্যে ১৫৮ জনকে মঙ্গলবার মুক্তি দিয়েছে কুয়েত সরকার।
এ ছাড়া আটক ৮২ জনের মধ্যে ৫১ জনের বিরুদ্ধে সরাসরি দূতাবাসে হামলা ও ভাঙচুরের প্রামাণ পাওয়ায় তাদের আটক রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অপর ৩১ জনের বিরুদ্ধে আগ থেকেই বিভিন্ন মামলা থাকায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি বলে জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস।
এতে আরও বলা হয়, আটক শ্রমিকদের মুক্তির ব্যাপারে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গত রোববার থেকে দূতাবাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম অভ্যাহত আছে বলে জানানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় কুয়েতে গ্রেফতারকৃত নিরীহ শ্রমিকদের মুক্তির জন্য রাষ্ট্রদূত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কুয়েতের চিফ অব প্রটোকল ও দেশটির কলার বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এ নিয়ে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কোনো ধরনের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৭ জানুয়ারি সকালে কুয়েতস্থ খালেদিয়া এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে প্রবাসী বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশিরা। এতে দূতাবাসের তিন কর্মকর্তা আহত হন। এ সময় দূতাবাসের আসবাবপত্র ও কম্পিউটার ভাঙচুর করা হয়। পরে স্থানীয় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
লেসকো কোম্পানির চার শতাধিক শ্রমিক আকামাহীন ও বকেয়া বেতন, থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার দাবি নিয়ে দূতাবাসে অবস্থান নেন। বিক্ষুব্ধ ও ভুক্তভোগী শ্রমিকরা বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামের কাছে দালালদের নাম, পাসপোর্ট কপি, ভুক্তভোগী শ্রমিকদের নাম ও সিভিল আইডি নম্বরসহ লিখিত অভিযোগ দেন।
রাষ্ট্রদূত তাদের অভিযোগ শোনেন এবং তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করে সমস্যা সমাধান করে একীট ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেন। পরে শ্রমিকদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন রাষ্ট্রদূত।
এ সময় শ্রমিকরা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে না পেরে বের হওয়ার সময় দূতাবাসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। উত্তেজিত প্রবাসী শ্রমিকরা বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দূতাবাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলায় দূতাবাসের তিন কর্মকর্তা আহত হন।
প্রসঙ্গত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত বর্তমানে দেশটিতে প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন।
পরিবারের সচ্ছলতা আনতে সুখের আশায় দালালের ফাঁদে পড়ে ধার-দেনা, ভিটেবাড়ি বন্ধক রেখে সাত থেকে আট লাখ টাকা ভিসা কিনে কুয়েতে এসে শ্রমিকরা আকামাহীন, কর্মহীন, চার-পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন।
অনেক সময় আকামা না থাকার কারণে পুলিশি ঝামেলার শিকার হতে হয়। মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রাস্তাঘাট পরিষ্কার ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোম্পানির শ্রমিকরা কাজ করেন। প্রতিনিয়ত কর্মস্থলে আতঙ্ক ও হতাশার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।
পিবিএ/এফএস