লালমনিরহাটে কৃষি জমিগুলো তামাক চাষের দখলে

পিবিএ,লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে কৃষি জমিগুলো তামাক চাষের দখলে যাওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। উত্তরালের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট শস্য ভান্ডারের খ্যাতি অর্জনকারী একটি জেলা। এ জেলায় কৃষি চাষের জন্য জমি গুলো এখন তামাক চাষের দখলে চলে গেছে। গত তিন দশকে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক জেলার ৮০ শতাংশ কৃষি জমি গ্রাস করেছে। এখনও কৃষকদের মাঝে বেড়েই চলছে তামাক চাষের প্রবনতা।

অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, তামাক শুকানোর জন্য জেলার তামাক ক্ষেত ও বসতভিটার পাশে তৈরি করা হচ্ছে তামাক চুল্লি। এ কারনে এলাকায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গাছ। এ কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বনায়ন প্রকল্প। স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকদের ভাষ্যমতে তামাক চাষের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি জমির বর্গামূল বেড়েছে কয়েকগুণ। যে জমি গত কয়েক বছর পূর্বে বর্গা হতো ৪/৫ হাজার টাকায় সে জমি এখন বর্গা হচ্ছে ১০-১৫ হাজার টাকা। বর্গামূল্য বৃদ্ধির কারণেই সাধারন কৃষকেরা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমি আবাদি রয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে তামাক আবাদ করা হয়েছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার আলু আবাদ তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। ৪ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ করা হয়েছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করেছে। আর যেসব জমিতে আলুর আবাদ হয়নি সেসব জমিতে এবার তামাক চাষ হয়েছে।

লালমনিরহাট মসলা গবেষণা উপকেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাক আহমেদ জানান, মসলা জাতীয় ফসল শাক-সবজি বাহারি ফুল চাষের জন্য এ জেলার মাটি অত্যন্ত উপযোগী। তাই তামাকের বদলে মসলা জাতীয় ফসল চাষ করলে এখানকার কৃষকেরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। আর এজন্য কৃষকদের মাঝে সচেতেনতা বাড়ানো বিশেষ প্রয়োজন। যদি কৃষকদের মাঝে এ ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা যায় তাহলে কৃষকরা তামাকের বদলে এসব ফসল চাষ করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এ ব্যাপারে তিনি সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বিছনদই গ্রামের কৃষক মোহেবুল হক বলেন, রবিশস্য আবাদ করার পর তা বাজারজাতকরণে রয়েছে নানা সমস্যা। অপরদিকে তামাক চাষে পুঁজিবাদী তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের আগাম টাকা ঋণ ও নানা ধরনের উপকরণের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে আসছে। যেটা আমরা রবিশস্য চাষ ও বাজারজাতকরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর নিকট আমরা সহজে কোন কিছুই পাই না।

কৃষক মিজান অভিযোগ করে বলেন, কৃষি উপকরণের মূল্য অনুযায়ী ইরিবোরো ধান ও রবিশস্য চাষ আমাদের জন্য অধিক খরচ। একই অভিযোগ করেন ভোটমারী এলাকার রহেদুল ও রহিম। তাঁরা বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় অফার নিয়ে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছে। পুঁজিবাদী বিভিন্ন কোম্পানি কৃষকদের আগাম টাকা, সার, বীজসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় কৃষকরা রবিশস্যের পরিবর্তে এখন তামাক চাষ করছে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের জেলা কর্মকর্তা বিধূ ভূষন রায় জানান, শুধুমাত্র জনসচেতেনতার অভাবেই জেলার সাধারন কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে। এছাড়া তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের আগাম টাকা ঋণ ও নানা ধরনের উপকরণের লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার জন্য চাষিরা তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। কিন্তু এতে করে পরিবেশ ও জমির কি পরিমান ক্ষতি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না তারা। তবে কৃষকরা যেন তামাকের বদলে অধিক মুনাফার ফসল ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুকে সেজন্য সরকারীভাবে আমরা চেষ্টা করছি।

পিবিএ/এএইচআর/এমএসএম

আরও পড়ুন...