শতাব্দী আলম: দুইটা কিনলে একটা ফ্রি! ভোট দিলে দুপুরের খাবার ফ্রি! বাটা জুতায় ৭০% পর্যন্ত ছাড়ও দেয়া হয়! ভোট দিলে ১% কর মওকুফ! আবার লোক টানতে গানের ব্যবস্থাও হয়। যখন কোন পণ্য বাজারে অচল হয় অথবা বেখাপ্যা অনুষ্ঠানে লোক আসে না তখন এমন চটকদার লোভনীয় অফার দিয়ে দর্শক বা ক্রেতা আকর্ষন করা হয়। একটু হলেও পরবর্তি অনুষ্ঠানের প্রতি বা পণ্য কিনতে আগ্রহ বাড়ে বৈকি। এখন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি এমন পর্যায়ে নেমেছে যে বিভিন্ন প্রনোদনা দিয়ে ভোটার আনার ব্যবস্থা করতে হবে। নচেৎ এত মহাসমারোহে কোটি কোটি অর্থ খরচে নির্বাচনের কোন আকর্ষনই থাকবে না। কারন ভোটারই নেই। নির্বাচন দিয়ে কি হবে।
উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চলছে। তবে কিনা ভোটারের উপস্থিতি আশংকাজনকভাবে কম। জাগো নিউজ, যুগান্তর, বিডি নিউজ২৪, প্রথমআলো সহ দেশের মূলধারার সব সংবাদ মাধ্যমে ভোটার কম উপস্থিতির বিষয়টি প্রকাশ করেছে। জাগো নিউজ লিখেছে তিন ঘন্টায় পূর্ব রামপুরা হাইস্কুল কেন্দ্রে মাত্র সারে আট শতাংশ ভোট পড়েছে। সময়নিউজ.টিভিতে দেখা গেলো তিন ঘন্টায় একটি কেন্দ্রে মাত্র ৯১ ভোট । সেখানে মোট ভোট আড়াই হাজার। ভোটার গেল কই ? জনমনে যেমন প্রশ্ন ! খোদ নির্বাচন কমিশনও এর সদুত্তর পাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এত মহাসমারোহে ভোট আয়োজন নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিবে। তবে কেন্দ্রে ভোটার আনার নানান কৌশল নিতে পারে নির্বাচন কমিশন। আর রাজনৈতিক দলগুলো লটারিতে পুরস্কার ঘোষনা করতে পারে। অবশ্য পুরস্কারের বিষয়টি নির্বাচন কমিশন অনুমোদন থাকা বাঞ্ছনীয়। যেমন ভোট শেষে লাটারির মাধ্যমে প্রতি কেন্দ্রে তিন বা দশ জনকে থালা, বাটি, হাড়ি, পাতিল জাতিয় বিশেষ পুরস্কার দেয়া যেতে পারে। করদাতা বা সামাজিক কর্মকান্ডে যেমন সরকার বিশেষ পুরস্কার দেয়। ঠিক একইভাবে ভোট দিলে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিতে পারে সরকার। ব্রিটেনে ভোট দিলে নাগরিক পরিচয় পত্রে নম্বর যোগ হয়। ভবিষ্যতে নাগরিকদের ভোটে আগ্রহী করতে সরকার সেরকম কিছু উদ্যোগ নিতে পারে। আইন করে ভোট প্রদান বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
আমি গত ৩০ জানুয়ারী ঢাকা সিটির কয়েকটি এলাকায় সরজমিনে ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে লিখেছি ভোটের মাঠ সরব, ভোটার নিরব। ভোটের দিন বাস্তবেও তেমনটি দেখা যাচ্ছে। শুধু যে ঢাকা সিটি নির্বাচনের চিত্র এমন তা কিন্তু না। সাম্প্রতিক প্রতিটি নির্বাচনেই এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণার নতুন বিষয় হবে নির্বাচনে ভোটারের অনুপস্থিতির কারন।
ভোট নাগরিকের অধিকার। ভোট প্রয়োগ করা নাগরিকের কর্তব্য। তবে অসুস্থতা বা অন্য কারনে যদি কেহ ভোট দিতে না যান সে অন্য কথা। তবে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ভোটের প্রতি সচেতন নাগরিকরা আগ্রহ হাড়িয়েছে। নাগরিকদের ভোট দিতে উৎসাহিত করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক