পিবিএ ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন ভোটের গোপন কক্ষে কোনো স্থানে কারও কারও ‘উঁকি’ দেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, যেখান শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, সেখানে উঁকি দেয়াটা বড় বিষয় নয়।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি-ডিএসসিসি) নির্বাচনের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি দেখেছি কয়েকটি কাগজে লিখেছে- গোপন কক্ষে কোন কোন জায়গায় উঁকি দেয়া হয়েছে। এত বড় একটি নির্বাচন আড়াই হাজার ভোট কেন্দ্র, ১৩ হাজারেরও বেশি বুথ, এখানে কয়েকটি গোপন কক্ষে কেউ উঁকি দিয়েছে, এটা কি বড় বিষয়? নাকি এত বড় একটি কর্মযজ্ঞ, এত ভোটার, এতগুলো ভোটকেন্দ্র, কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়নি, মারপিটের ঘটনা ঘটেনি, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে, কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেনি- সেটি মূল বিষয়?’
‘আমি মনে করি অতীতের দিকে যদি তাকাই, সেই হিসেবে উঁকি দেয়াটা বড় বিষয় নয়। কিন্তু কেউ কেউ এই উঁকি দেয়াটাকে বড় বিষয় হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। যা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কে কোথায় উঁকি দিল সেটিকে বড় করে দেখিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রক্রিয়া বিএনপির। সেটিকে যারা বড় করিয়ে দেখাচ্ছে তারাও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির অপচেষ্টার সাথে অংশগ্রহণ করছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গতকালের দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপমহাদেশের অন্যান্য নির্বাচন বিবেচনা করলে গতকালের নির্বাচনটি ইতিহাসের একটি ভালো নির্বাচন ছিল।’
ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন যে, ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। আমি হিসাব করে দেখেছি যে মোটামুটি ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই ভোটার উপস্থিতি আরও অনেক বেশি হতো। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ যুক্ত বলে আমি মনে করি।’
‘প্রথমত, টানা তিন দিন ছুটি, সেই কারণে ঢাকা শহরের অনেক ভোটার গ্রামে চলে গেছে। দ্বিতীয়ত, শুরু থেকেই ইভিএম নিয়ে বিএনপির নেতিবাচক প্রচারণা। ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা সংশয় তারা তৈরি করেছে। ইভিএমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর কারণেই আমি মনে করি ৮/১০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। কারণ তারা এটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা (বিএনপি) প্রথম থেকে বলে এসেছে নির্বাচনকে তারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছে। এমনকি ভোটের দুইদিন আগে (বিএনপি মহাসচিব) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেছেন, আমাদের সফলতা হচ্ছে সেখানেই যে আমরা ঘর থেকে বের হতে পেরেছি অর্থাৎ নির্বাচনী প্রচারণা-প্রপাগান্ডা চালাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এতে জনগণের মধ্যে এই ধারণা জন্মেছে যে, বিএনপি তো জয়লাভের জন্য নির্বাচন করছে না। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে না। সেই কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। এসব কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা ভোট দেয়ার জন্য যোগ্য, তাদের ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ভোটার হয়, কিংবা এরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে যারা ভোট দেয়ার জন্য যোগ্য, তাদের মধ্যে মাত্র ৬০ শতাংশ ভোটার হয়। সেই ৬০ শতাংশের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। কোনো নির্বাচনে ৪০ শতাংশ, যখন খুব ভালো ভোট হয় তখন ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে।’
‘সেই হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটদানের যোগ্য ভোটারের তুলনায় আমাদের দেশে গতকাল যে নির্বাচন হয়েছে সেখানেও ভোটার উপস্থিতি অনেক ভালো।’
ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন দল ও দলীয় প্রার্থীদের জন্য ক্যাম্প খোলা দেশের নির্বাচনের ঐতিহ্য উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে ভোটাররা গিয়ে তাদের ভোটার স্লিপ গ্রহণ করেন। এখানে বিভিন্ন কেন্দ্রে আমাদের দলের পক্ষ থেকে, প্রার্থীদের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছিল। নির্বাচনী আইন মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে করা হয়েছিল।’
‘সেখানে ভোটার স্লিপ দেয়া হয়েছে, কীভাবে ভোট দিতে হয়- সেগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের (ভোটারদের) একটু এগিয়েও দেয়া হয়েছে। এগুলো চিরচারিত নিয়ম, এগুলো নিয়ম ভঙ্গ নয়। বরং এগুলো আমাদের দেশের নিয়ম ঐতিহ্য, এগুলো সব দলই করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এখন বিএনপি করতে পারেনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে, সব ক্ষেত্রে নয় অনেক ক্ষেত্রে করতে পারেনি, এটি তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা।’
পিবিএ/এমআর