পিবিএ,ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে।
সেখানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে গত বছরের ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে দলীয় প্রধানের কারাবাসের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার বাদ জুমা খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনায় দেশব্যাপী মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিলের অয়োজন করা হয়। এছাড়া তার মুক্তির দাবিতে আজ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সমাবেশ করার মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছে। দুপুর ২টা থেকে সমাবেশ শুরু হবে।
বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা বিচারাধীন থাকলেও কারামুক্তিতে বাধা মাত্র দুটি মামলা। তার কারামুক্তিতে এখন অন্তত এই দুই মামলায় জামিন পেতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাবি করেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এতদিন কারাগারে থাকার কথা নয়। আদালতের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এটা হয়েছে। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় তাকে কারাবন্দি রাখা হয়েছে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনে যা আছে তা-ই হবে। খালেদা জিয়া অনেক অসুস্থ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী জীবন রক্ষার্থে দণ্ডাদেশ সাময়িক স্থগিত করে তার ইচ্ছামতো দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অনুমতি দেয়ার সুযোগ আছে।
সমাবেশের মৌখিক অনুমতি, ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি : দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে আজ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি বিএনপির। এজন্য ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন।
ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা থাকবেন।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, সমাবেশ করার অনুমতির জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলামকে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। শুক্রবার দুপুরে ডিসি রমনা থেকে আমাকে ফোন করে সমাবেশ করার মৌখিক অনুমতি দেন। এছাড়া তারা ডিসি মতিঝিলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেন। পরে আমরা ডিসি মতিঝিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তিনি আমাদের জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এ্যানী বলেন, সাধারণত সমাবেশের দিন সকালে সমাবেশের অনুমতির চিঠি দেয়া হয়। যেহেতু মৌখিক অনুমতি পেয়েছি, আশা করছি আগামীকাল (আজ) সকালে অনুমতির চিঠি পাব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকে, তাই এদিনও অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে উচ্চ পর্যায়ের কেউ যদি মৌখিক অনুমতি দেয়ার কথা বলে থাকে সেটা আমার জানা নেই।
সমাবেশ থেকে ‘বড় মেসেজ’ দেয়া হবে- খসরু : এদিকে সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দেশবাসী ও বিদেশিদের বড় ধরনের মেসেজ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান। ‘সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বনাম ভোটের অধিকার’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর উপলক্ষে বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, আমি আশা করব, আপনারা (বিএনপির নেতা-কর্মী) জনসভায় দলেবলে উপস্থিত হবেন। কারণ আন্দোলন তো চলছেই, এখন আন্দোলন নতুন রূপ নেবে। এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা দেশনেত্রীকে অবিলম্বে মুক্ত করার বিষয়ে এ জনসভা থেকে দেশবাসী ও বিদেশিদের বড় মেসেজ দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনে গিয়েছি গণতন্ত্রের মাকে মুক্ত করার আন্দোলনের অংশ হিসেবে। এখন সেই আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মা এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য বিভিন্ন সময়ে আমরা কর্মসূচি দিয়েছি এবং নির্বাচনেও অংশ নিয়েছি। এর কোনোটাই আজ পর্যন্ত কাজে আসে নাই। সুতরাং আগামীর জন্য আমাদের ভাবতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আমীর খসরু বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের মা, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জেলখানায় রয়েছেন আগামীকাল দুই বছর হতে যাচ্ছে। এই যে জনগণের ভোট, মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া- এসব কিছুর সঙ্গে খালেদা জিয়ার জেলে থাকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ওনাকে জেলে রেখে জনগণের ভোটের মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। সুতরাং যতদিন গণতন্ত্রের মা জেলে থাকবেন ততদিন ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন না।
আয়োজক সংগঠনের সহসভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, এলডিপি একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।
রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ বিএনপি নেতাদের : এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপি নেতারা।
জুমার নামাজের পর মোহাম্মদপুর টাউন হল মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সাংবাদিকদের বলেন, নেতাকর্মীরা আন্দোলন করছেন। সেজন্য লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা আছে, হাজারও নেতাকর্মী জেলে আছেন। তারপরও আমরা আন্দোলনে আছি।
এ রকম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদিনের আন্দোলনে সম্ভব হয় না। আন্দোলন তীব্র হলে সম্ভব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
একই সময়ে নয়াপল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তার সঙ্গে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিলেন।
এর আগে বেলা ১১টায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে লিফলেট বিতরণ করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা শাহবাগ এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন।
পিবিএ/এমআর