করোনাভাইরাসের কারণে

লাকসানের শঙ্কায় উপকূলের কাঁকড়া খামারিরা


শেখ হারুন অর রশিদ, পিবিএ, খুলনা : করোনাভাইরাসের কারণে চীনসহ কয়েকটি দেশে কাঁকড়া রপ্তানী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত খুলনা ও সাতক্ষীরা উপকুলের কয়েক হাজার মানুষ। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসকে এ অঞ্চলে কাঁকড়ার ভরা মৌসুম ধরা হয়। আর এই ভরা মৌসুমে কাঁকড়া বিক্রি বন্ধ থাকায় লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন ছোট বড় খামারিরা। একই সাথে ব্যবসায়িরাও হাত পা গুটিয়ে বসেছেন।
সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি প্রদীপ কুমার ঘরামি জানান, চীনে করোনা ভাইরাসের কারণে ঢাকার রপ্তানীকারকরা এ মূহুর্তে কাঁকড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। একই সাথে তাদের কাছে পাওনা টাকাও দিতে চাইছেন না তারা। এতে একদিকে ব্যবসা বন্ধ অপরদিকে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন আড়ৎদাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের কাঁকড়া আমদানিতে আগ্রহী হয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে ওইসব দেশে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। কাঁকড়া গ্রেড অনুযায়ি বিক্রি শুরু হয়। কাঁকড়ার আকার ও গুণগত মান অনুযায়ি কেজি প্রতি চীনে বিক্রি হতো এক হাজার ৮০০ থেকে দু’ হাজার টাকায়।
চীনে রপ্তানির জন্য কয়রা ও পাশ্ববর্তি এলাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন কাঁকড়া ঢাকার উত্তরায় পাঠানো হতো বলে স্থানীয় মৎস্য অফিস থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস আক্রমণের ফলে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় আড়ৎগুলোতে ব্যবসায়িরা এক প্রকার হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। এদিকে সারা বছর অপেক্ষায় থাকা কাঁকড়ার খামারিদেরও হতাশায় দিন কাটছে। অচলাবস্থা না কাটলে এ অঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার ছোট বড় খামারিকে কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।
খুলনার কয়রা উপজেলার কাঁকড়া চাষী হেমন্ত ঢালী, সন্তোষ মিস্ত্রি, কামরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ শেখ, কানাই মন্ডলসহ কয়েকজন বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকে। এ কারণে এ দুই ব্যবসায়িরা স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে। ফলে দামও বেশি পাওয়া যায়। সকলেই এ সময়টার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
খুলনা মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরে কয়রা উপজেলার চিংড়ি চাষীরা বাগদার সাথে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়ে। চিংড়িতে লোকসান হলে তা কাঁকড়ায় পুষিয়ে যায়। এভাবে এলাকার চিংড়ি চাষীদের মাঝে সচ্ছলতা ফিরেছিল। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমে এসে কাঁকড়া রপ্তানী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়িরা কাঁকড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এতে করে কয়েক হাজার চিংড়ি চাষীও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ জানান, গত বছরে জেলায় ৮১০ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়। ওই জমি থেকে ৫ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন ও সুন্দরবন থেকে ২ হাজার ১০৯ মেট্রিক টন কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়। এলাকায় এবার কাঁকড়া চাষীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষমাত্রাও দ্বিগুন ধরা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে রপ্তানী বন্ধ থাকায় সকলেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...