পিবিএ ডেস্ক: মেয়ে রাইসাকে নিয়ে বাবলি খুব দুশ্চিন্তায় ভুগছে আজকাল। মাত্র ক্লাস ওয়ানে উঠলো নেহা, ভালো একটি স্কুলে চান্সও পেয়েছে। পড়ালেখায়ও সে যথেষ্ট ভালো। তাহলে দুশ্চিন্তা কি নিয়ে তাই তো? দুশ্চিন্তা হলো মেয়ে সকালে উঠে স্কুলে যেতে চায় না একদমই। বাবা-মা সবাই মিলে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে পারে না। স্কুলে না যাওয়ার জন্য বিছানাতেই ঝিম ধরে শুয়ে থাকে। কখনো কখনো উঠে বসে কান্নাকাটিও করে। বাবা-মা কখনো বুঝায়, প্রশ্ন করে, কখনো বকাঝকাও করে। কিন্তু সমস্যা কোথায় সেটা বাবলি বা তার স্বামী কেউই বুঝে উঠতে পারে না। রাইসা স্কুলের বিষয়ে কোনো কথাও বলে না, স্কুলের কথা সে এড়িয়েও যায়।
এটাকেই মূলত স্কুলভীতি বলে। এই সমস্যা অনেক শিশুর মধ্যে রয়েছে। নতুন স্কুলে ভর্তি বা স্কুলের নানা পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পেরে শিশুরা স্কুলের প্রতি কোনো আগ্রহবোধ করেনা। এর পেছনে থাকতে পারে নানাবিধ কারণ। তাই প্রথমেই এর কারণ খুঁজে বের করুন, তারপর পরামর্শ নিন-
কেন যেতে চাচ্ছে না স্কুলে
১. ছোট শিশুরা তাদের মা-বাবা ও তার বাসার নিরাপদ একটা আশ্রয় থেকে বেরিয়েই মূলত প্রতিদিন স্কুলে যায়। ভাবলেই বোঝা যায় এটা বেশ কঠিন। এরকম আলাদা বা অপরিচিত পরিবেশে অন্য শিশুদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়, কখনোবা অনেক সময় লেগে যায়। এতে সে স্কুলে যেতে চায় না।
২. প্রায়ই দেখা যায় আপনার সন্তানটি তার সহপাঠী অথবা অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের টিপ্পনি, মানসিক, শারীরিক আঘাতের শিকার হচ্ছে। সে হয়ত আপনাকে কখনো বলছে, কখনোবা সেটি লুকিয়ে যাচ্ছে। এতে করে শিশুটি স্কুলে অনিরাপদবোধ করছে। ফলে ভীতি আর অনীহার কারণে যেতে চায় না স্কুলে।
৩. স্কুলে যাওয়ার পথে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে অনেক মেয়েশিশু স্কুলে যেতে চায় না। নিজের ক্লাসে সহকর্মী বা শিক্ষক যদি বাজে ব্যবহার করে তাহলে শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। অনেক লাজুক ছেলেমেয়েরাও স্কুলে যেতে বেশ ভয় পায়।
৪. আপনার সন্তানের যদি ক্লাসের পড়া বুঝতে যদি কঠিন লাগে বা শিক্ষকের সহযোগিতা যদি না পায় তাহলে তার স্কুলে যেতে একদমই ভালো লাগে না। অনেক সময় দেখা যায় শ্রেণীশিক্ষক যদি কড়া হয়, তাহলেও তারা স্কুলে যেতে গড়িমসি করে।
৫. স্কুলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি একেবারেই নিষিদ্ধ। সরকার আইন করে এই ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। কিন্তু এখনও অনেক স্কুলে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়। এটা শিশু এবং অভিভাবক- উভয়ের জন্যই আতঙ্কজনক। ফলে শিশুরা এই শাস্তির ভয়ে স্কুলমুখো হতে চায় না।
৬. পারিবারিক অশান্তিও স্কুল অনীহার অন্যতম কারণ। বাবা-মায়ের ঝগড়া, অন্যান্য পারিবারিক বিবাদ শিশুর মনের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পরিবারের অশান্তি থেকেই শিশুর মনে চলে আসে নিরাপত্তার অভাব। সে তার স্কুলে যেতে বিরক্ত, অসহ্য লাগে।
৭. স্কুলে তো একটা শিশু শুধু পড়াশুনাই করতে যায়না, তার খেলাধুলাসহ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধনের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ, শিক্ষাসফর তার প্রতিভাকে বিকশিত করে তোলে। স্কুলে খেলার মাঠ বা অন্যান্য সুবিধাগুলো না থাকলে সে স্কুলের প্রতি আগ্রহবোধ করে না। সে শুধু পড়াশুনার চাপে হিমশিম খেতে চায়।
কী করবেন তাহলে
১. সবার আগে আপনার শিশুকে স্কুলের প্রতি আগ্রহী আর কৌতুহলী করে তুলতে হবে। প্রথমে অল্প অল্প করে তাকে স্কুলে নিয়ে যান। আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে অভ্যস্ত করে ফেলুন।
২. আপনার সন্তান লাজুক স্বভাবের হলে শিশুরা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকে। তাই তার সঙ্গে অভিভাবক হিসেবে সহজ হওয়ার চেষ্টা করুন। তার সঙ্গে বেশি করে কথা বলুন, ফ্রি হওয়ার চেষ্টা করুন। স্কুলে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন করুন। তাকে বেশি করে সময় দিয়ে তাকে সহজ করুন, লজ্জা কমান।
৩. স্কুলে যেতে না চাইলে তাকে জোরাজুরি করবেন না। সময় নিন। আর ভুলেও কখনো স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে কোনোরকম চাপাচাপি করবেন, কোনো প্রলোভনও দেখাবেন না। এতে তার সুশিক্ষাটা হবে না।
৪. শিশুকে স্কুলের ব্যাপারে উৎসাহিত করে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তার স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। সে কেন স্কুলে যেতে চায় না, সে ব্যাপারে সবসময় জানার চেষ্টা চালিয়ে যান।
৫. কেন স্কুলে যেতে চাচ্ছো না- সেটা নিয়ে অকারণে সন্তানকে বকাঝকা করবেন না। আশেপাশে সমবয়সি কোনো শিশু বা বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা করতে যাবেন না। এতে সে নিজেকে আরও ছোট মনে করবে, অপমানিত বোধ করবে।
৬. শিশুর শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক সুস্থতার দিকে সবসময় নজর রাখুন। তাকে আশ্বস্ত করুন। স্কুল সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিন। সন্তানকে প্রশ্ন করে বুঝুন যে সে হীনম্মন্যতার শিকার কিনা। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান পুরোদমে।
৭. আর সমস্যার যদি কোনো সমাধান না পান, প্রয়োজনে স্কুল পরিবর্তনের মাধ্যমে শেষ চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
পিবিএ/জেআই