পিবিএ,ঢাকা: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে এখনও দোলাচল কাটেনি বিএনপিতে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন এবং ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় সিটি নির্বাচন নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে নগর বিএনপিতে। এমনকি সম্ভাব্য প্রার্থীরাই এ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নন। এমন প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আসছেন দলটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নগর বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে মহাসচিবের চট্টগ্রাম আসার কারণ হিসেবে, কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন জোরদার করাসহ আরও বিভিন্ন ইস্যুর কথা বলা হলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, মূলত আসন্ন সিটি নির্বাচনে নিয়ে নগর বিএনপির মতামত ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতেই আসছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম নগরীর নাসিমন ভবনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা হবে। এ জন্য চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পদে থাকা সব নেতা, থানা ও ওয়ার্ড কমিটি এবং অঙ্গ-সহযোগী সব সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নগর বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, চসিক নির্বাচন কেমন হতে পারে তার একটি নমুনা ইতোমধ্যে উপনির্বাচনে দেখা গেছে। প্রচার-প্রচারণায় সমানে সমান থাকার পরও নির্বাচনের দিন বিএনপি নেতাকর্মীরা কেন্দ্রেই যেতে পারেননি। শহরে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা থাকলেও বোয়ালখালীতে একতরফা ভোটকেন্দ্র দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় দলীয় সর্বোচ্চ সক্ষমতা দেখিয়েও চসিক নির্বাচনে টিকে থাকা যাবে তারা এটা মনে করেন না। যেখানে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে না, সেখানে বিএনপির ভোটে অংশ নেয়া মানে আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। সিটি নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘উপনির্বাচন ও ঢাকা দুই সিটি নির্বাচন আমাদের অনেক কিছু বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার না নেয়া নির্ভর করছে সাংগঠনিক শক্তির ওপর। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি বিএনপির কতটুকু অনুকূলে আছে সেটা বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনির্বাচনে দেখেছি, মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত ভোট দিয়েছে। হামলা-সন্ত্রাস করে আমাদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। ২৫ শতাংশ মানুষকেও ভোটকেন্দ্রে আনা সম্ভব হয়নি। পরপর তিনটি নির্বাচনে আমাদের যেভাবে হারানো হয়েছে, এরপর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে একই ফলাফল আসবে।’
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থেকেই তাকে নির্বাচন করতে হয়। এছাড়াও আলোচনায় আছেন সহ-সভাপতি সৈয়দ আজম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও পোশাক ব্যবসায়ী এরশাদ উল্লাহ।
নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত এবং আমাদের অধিকাংশ নেতাদের মত হচ্ছে- নির্বাচনে না যাওয়া। এরপরও কেন্দ্র থেকে যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমাদের নির্বাচন করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনী তফসিল। ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২৯ বা ৩০ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের ভোটগ্রহণ করা হতে পারে।
বিগত নির্বাচনের ফলাফল
১৯৯০ সালের ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নাম পরিবর্তিত করে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ করা হয়। সরকার কর্তৃক জাতীয় পার্টির নেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীকে মেয়র নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালের প্রথম নির্বাচন পর্যন্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন।
১৯৯৪ সালের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হন। পরের দুই দফায়ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতা এম মনজুর আলম দলবদল করে বিএনপির সমর্থনে মেয়র পদে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। সেবারই প্রথম বিএনপি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে জয়ের স্বাদ পায়। কিন্তু ২০১৫ সালে মনজুরকে ফের প্রার্থী করা হলেও তিনি আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে পরাজিত হন।
পিবিএ/এমআর