আংশিক কমিটিতেই মেয়াদ ফুরোল মহানগর বিএনপির

আংশিক কমিটিতেই মেয়াদ ফুরোল মহানগর বিএনপির

পিবিএ,ঢাকা: গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর রাজধানীতে বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কেউ বলছেন, মহানগরীর নেতারা ব্যর্থ! কেন্দ্র ও মহানগরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। তবে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করেন।

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের কয়েকটি থানার বেশ কয়েকজন নেতার মতে, গত এক যুগ ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন আর জুলুম নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বিএনপি অনেকটা কাহিল। ঢাকাসহ দেশের তৃণমূলের এমন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে কমপক্ষে দুই-তিনটি মিথ্যা মামলা নেই? ঢাকার দুই সিটির সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রত্যেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দশটির বেশি মামলা। এরপরও তারা টিকে আছেন। এমতাবস্থায় তাদেরকে ব্যর্থ বলা জুলুমেরই নামান্তর। সুতরাং ব্যর্থতার মানদণ্ড ঠিক না করেই নেতৃত্বের পরিবর্তন করলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বরং নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে মহানগর বিএনপিকে আরও বেশি গতিশীল করা উচিত। অবশ্য সমন্বয়ের অভাব রয়েছে এটাও অনেকে স্বীকার করেছেন। তবে মহানগর বিএনপিকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে দলের হাইকমান্ড।

ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগ করে সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল। ঢাকা দক্ষিণে ৭০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হন হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। সোহেল ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবও। বাশার একাধারে ২০ বছর কাউন্সিলর এবং অবিভক্ত ঢাকার ভারপ্রাপ্ত মেয়রও ছিলেন। অন্য দিকে ৬৬ সদস্যবিশিষ্ট ঢাকা বিএনপির উত্তর সভাপতি হন এম এ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। দু’জনই সাবেক কমিশনার। এর মধ্যে উত্তরের কাইয়ুম মামলাজনিত কারণে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির মহানগর কমিটিগুলোর মেয়াদ দুই বছর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকায় বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। দলে গতি আনতে মহানগরকে দুই ভাগ করেও আশানুরূপ ফল হয়নি। এ ক্ষেত্রে মহানগরীর বর্তমান কমিটিকে বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা এবং মহানগরীর কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সহযোগিতা না করারও অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা সিটি নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সমতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় নেতাকর্মীরা সরব থাকলেও ভোটের দিন অধিকাংশ নেতাকে কেন্দ্রে দেখা যায়নি। এতে দলের হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ। বিশেষভাবে ঢাকা উত্তর সিটি নিয়ে। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের মহানগর কমিটি দ্রুত পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভোটের দিন নেতারা কে কোথায় ছিলেন, কেন কেন্দ্রে যাননি তা বিস্তারিত জানাতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কেননা আন্দোলন সংগ্রামে সফলতা আনতে রাজধানীতে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প দেখছে না বিএনপি। কেন্দ্রের পাশাপাশি থানা এবং ওয়ার্ডেও তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব আনার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নতুন কমিটি না করে বর্তমান কমিটিকে দিয়েই কিভাবে দলকে আরও সুসংগঠিত করা যায় সেটাও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে একেবারেই নতুন কাউকে ঢাকা মহানগরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতৃত্বে আনা নিয়েও দ্বিমত দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যে। যেহেতু ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের পরও যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, যারা আমাদের ব্যর্থ বলেন তাদেরকে বলিÑ ব্যর্থতার মানদণ্ড কী? কঠিন দুঃসময়ে নগর বিএনপির দায়িত্ব পেয়ে ছয় শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে জেল খেটে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়ছি। প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা ঐক্যবদ্ধ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে দেশে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কবল থেকে দেশবাসীকে আমরা মুক্তি দিতে চাই। এটাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। সে জন্য ঢাকা দক্ষিণ বিএনপিকে সুসংহত করতে যা কিছু করা দরকার সবই আমরা করছি এবং করে যাবো। দলকে কিভাবে শক্তিশালী করতে হয় সেটা আমাদের জানা আছে।

ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক চিত্র তুলে ধরে সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার জানান, রাজনীতির এক ক্রান্তিকালে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা চলার মধ্যেই ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন আমাদের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। টানা ১০ মাস কারাভোগ করেন তিনি। ম্যাডামের হাজিরাকে কেন্দ্র করে তার গাড়িবহর থেকে প্রেস কাব এলাকায় ডিবি পুলিশ আমাকেও গ্রেফতার করে। দুই দফায় সাড়ে চার মাস জেল খেটেছি। আমার নামে ৬০টিরও বেশি মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা। আমার ছেলেকেও কারাভোগ করতে হয়েছে। এখনো বাসায় থাকতে পারি না। পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ভাড়াটিয়াদেরও হয়রানি করে। তিনি বলেন, সর্বশেষ হয়ে গেল সিটি নির্বাচন। আমরা একসাথে সহ¯্র জুলুম নিপীড়নের শিকার হয়ে কোনটি ছেড়ে কোনটি ধরব? এসবের মধ্যেও দলের সবধরনের কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছি। ২৫টির মধ্যে ২১টি থানা এবং ৭৫টি ওয়ার্ডের কমিটি পুনর্গঠন করেছি। সফলতা-ব্যর্থতার ভার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের হাতেই দিচ্ছি। দল পুনর্গঠন মানেই তো নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। নেতৃত্ব নতুন করে এসে হাজির হবে না। আমাদের মধ্য থেকেই তা বাছাই করতে হবে। আমরা সম্মিলিতভাবে নগর বিএনপিকে আরও সুসংহত করে এগিয়ে নিতে চাই। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ও দেশনেত্রীকে মুক্তির আন্দোলন চলছে। শেষ পর্যন্ত আমরা লড়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

অবশ্য নেতৃত্ব পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে সবসময় স্বাগত জানান ঢাকা উত্তর বিএনপির সেক্রেটারি আহসানউল্লাহ হাসান। তিনি বলেন, উত্তর সিটিতে ২৬টি থানা ও ৫৬টি ওয়ার্ডে পূর্ণ কমিটি ঘোষণা করেছি। আমরা এক নেতার এক পদ বাস্তবায়ন করেছি। সিটি নির্বাচনে ভোটাররা কেন্দ্রে যাননি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ধারণা পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার নিপীড়নের কারণে সবার মাঝে ভীতি তৈরি হওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। আমি নিজে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছি। উত্তর বিএনপি ব্যর্থ নয়। তাহলে কি বলবেন যে মরহুম সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালামের মতো নেতারাও ব্যর্থ? দলের হাইকমান্ড নেতৃত্বের পরিবর্তন চাইলে করবেন। এটাতো সংগঠনের পদ্ধতি। এক্ষেত্রে আমার কোনো দ্বিমত নেই।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...