রাজনৈতিক নেতাদের মতোই কথা বলছে সিইসি : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ফটো

পিবিএ,ঢাকা: ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার বাংলাদেশের জনগণকে নিজ দেশেই পরাধীন করে ফেলেছে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটি সভ্য দেশ হলে নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল, নির্বাচন কমিশনের প্রতি, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। সেটি না করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এখন রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তৃতা দিচ্ছেন। গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই সরকারের বেশরম সিইসি নরুল হুদা বলেছেন, ‘সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারের কাছে না গিয়ে রাস্তায় শোডাউন করেছে। আর সে কারণেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ শোডাউন ভোটের প্রচার কার্যক্রমেরই অংশ। ভোটাররা শোডাউনে অংশ নেয় কিন্তু ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যায় না এটার দায় নির্বাচন কমিশনের বেশি।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকে আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মো: মুনির হোসেন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঔপনেবেশিক আমলে জনগণের যতটুকু অধিকার ছিলো সেটাও আওয়ামী লীগ কেড়ে নিয়েছে। দেশের জনগণের এখন কোনো অধিকার ও মর্যাদা অবশিষ্ট নেই। নেই ভোটাধিকার। জনগণ বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, তাদের ভোটাধিকার হরণের জন্য জনম্যান্ডেটহীন সরকার খোদ নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের পুতুল করে রেখেছে। একবার বিনাভোটে এমপি ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন, আবার নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে সরকার গঠনের পর জনগণের সামনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতালোভী কদাকার চরিত্র স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার ভোটাধিকার হরণের নতুন যন্ত্র ইভিএম নিয়ে মাঠে নেমেছেন সিইসি নুরুল হুদা।

তিনি বলেন, বিতর্কিত এবং ক্রুটিপূর্ণ হওয়ার কারণে সারাবিশ্বে নিষিদ্ধ ইভিএম বাংলাদেশে আমদানি করতে রাষ্ট্রের খরচ হয়েছে শত-শত কোটি টাকা। এবারের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারো প্রমাণিত হয়েছে, ইভিএম হলো মহা ভোট চুরির শান্তিপূর্ণভাবে-নিরাপদে-ঝামেলামুক্ত যন্ত্র। অথচ, এই ভোট চুরির মেশিনের পক্ষে সাফাই গেয়েই চলছেন সিইসি। কারণ তাদের জনগণের ভোটের দরকার নেই, তাদের দরকার ইভিএমের নামে মানুষের ভোটাধিকারের সঙ্গে রঙ্গ তামাশা করা আর ইভিএম কেনার নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী পক্ষকে ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় দেখানোর জন্য স্বশস্ত্র শোডাউন দেয়। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের শোডাউনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের প্রতি তাদের আকাঙ্খার জানান দেয়। আবার জনগণ যখন দেখে, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ভোটাধিকার হরণের অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছে নির্বাচন কমিশন। জনগণ যখন দেখে ইভিএমের জনক খোদ সিইসির আঙুলেই সমস্যা, জনগণ যখন দেখে, কেন্দ্র দখল করে আগেই বুথের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষমতাসীন দলের লোক কর্তৃক ইভিএমের মাধ্যমেই একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়, তখন আর জনগণ ভোট কেন্দ্রে যেতে নিরাপদ মনে করে না। এই সরকারের আমলে জাতীয় কিংবা স্থানীয় সকল নির্বাচনেই ভোটাররা দেখছে, ভোট কেন্দ্রে যাওয়াটা তাদের পক্ষে বিপজ্জনক। কারণ অনেক ভোট কেন্দ্রের ভোটাররা রক্তাক্ত হয়ে বাসায় ফিরেছে। তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিক বা না দিক, নির্বাচন কমিশন এবং ইভিএম এ দুটিই ব্যবহৃত হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করার জন্য।

তিনি বলেন, খারাপ মানুষ যাতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে না পারেন, এ জন্য নির্বাচন কমিশনের উচিত সময়োপযোগী আইন ও বিধি তৈরী করা এবং নির্বাচনের এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা যেন জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। সিইসি সেটি না করে সারাবিশ্বে নিষিদ্ধ ইভিএম নিয়ে দেশে হেড মাস্টার সেজেছেন। সিইসির ক্ষমতা পেয়েই নিজের অখ্যাত ভাগ্নেকে যিনি এমপি বানানোর লোভ সামলাতে পারেননা তার মুখে আর ভোট নিয়ে কোনো কথা মানায় না। ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটাররা ইভিএম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেও সিইসি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপির এই যন্ত্র ব্যবহার করার আবারো ঘোষণা দিয়েছে। তার মানে ঢাকার মতো একই কায়দায় চট্টগ্রামে ভোট ডাকাতির সুযোগ তৈরির জন্য এটা করা হচ্ছে। সিইসির এই সিদ্ধান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...