ঢামেকে ছাদ চুইয়ে পড়ছে ময়লা পানি

পিবিএ, ঢামেক : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দার চিত্র এটি। ধারণক্ষমতার বেশী রোগী থাকায় স্পর্শকাতর নিউরো সার্জারী বিভাগের এই ওয়ার্ডের বারান্দায় বসানো হয়েছে প্রায় ২০ টি বেড (বিছানা)। যেই বারান্দায় একটি বেড বসানো হলেই রোগীর স্বজনদের যাতায়াতে অসুবিধা হয় সেইখানে সারিবদ্ধভাবে পাশাপাশি বসানো হয়েছো দু’টি করে বেড। এতে দুই বেডের মাঝে ফাঁকা রয়েছে এক ফিট পরিমান জায়গা।

ঢামেক হাসপাতাল
ছাদ ও দেয়াল বেয়ে দুই পাশ দিয়ে অঝোরে পড়ছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি।

এতেও তেমন অসুবিধা মনে করেন না রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনরা। কারণ, এর চাইতে বড় সমস্যাও তাদের পোহাতে হচ্ছে। আর তাহলো, ছাদ ও দেওয়াল বেয়ে প্রায় দু’পাশ দিয়েই অঝোরে পড়ছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি। এতে রোগী, তাদের স্বজন ছাড়াও ভিজে যাচ্ছে বিছানাসহ সব রোগীর ব্যবহারিক জিনিসপত্র। এথেকে বাঁচার জন্য রোগীসহ বিছানা ও ব্যবহারিক জিনিসপত্র ঢেকে রেখেছেন রেক্সিন ও পলিথিন দিয়ে।

শরিয়তপুর সদর উপজেলা থেকে ছোটবোন লিমাকে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন ভাই মো আলী হোসেন। তিনি বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরে ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই ১১ নম্বর অতিরিক্ত বিছানায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে তার ছোটবোন। ব্রেইন টিউমারের কারণে তাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এই হাসপাতালেই তার মাথায় অপারেশন করানো হয়। অপারেশনের পর থেকেই সে আবার এই বিছানায় রয়েছে।

ঢামেক হাসপাতাল
ছাদ ও দেয়াল বেয়ে দুই পাশ দিয়ে অঝোরে পড়ছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি।

ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই এই ছাদ থেকে বিছানার উপর ময়লা পানি পড়ছে। আশেপাশের আরো অনেক বেডেও পানি পড়ছে। দেয়াল বেয়েও পানি পড়ে মেঝেতে অর্ধফুট পানি জমে থাকে। অপারেশনের রোগী এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকলে তো যেকোনো সময় ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে ‘

লিমার মা রিজিয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিনই পানি পড়ে ফ্লোর ভরে থাকে। ডাক্তার নার্স সবাইকেই বলা হয়েছে। আয়াদের পানি পরিষ্কার করে দিতে বললে তারা বলে, ‘তোমরা নিজেরাই পরিষ্কার কইরা নাও’।

ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে গতকালই ঢাকা মেডিকেলের নিউরো সার্জারী বিভাগের এই ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন তাসলিমা বেগম (৬৫)। মায়ের পাশে থাকা তার মেয়ে বলেন, ‘গতকাল বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে গেছিলাম মা’কে। শুক্রবার হওয়ায় সেখানে নিউরোসার্জন না থাকায় মা’কে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এই নোংরা পরিবেশ; জানলেতো কখনওই আসতাম না ‘

জমে থাকা পানি কেনো পরিক্ষার করা হচ্ছেনা তা জানতে চাইলে ওয়ার্ডের আয়া হোসনে আরা ও সাহিদা বলেন, ‘কত আর পরিক্ষার করবো? পরিক্ষার করলে তো আবার সেই পানি জমা হবেই। প্রতিদিনই পরিক্ষার করি। ছাদের ফাঁকা যে জায়গা দিয়ে পানি পড়ে সেইটা আগে বন্ধ করলে আর পানি পড়তোনা। আমরা একবার ফ্লোরের পানি পরিক্ষার করে দিলেই আর সমস্যা হতোনা ‘

এ বিষয়ে কথা হলে ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ চারুলতা বিশ্বাস নিজেও ক্ষোভের সাথে জানান, এই ছাদ থেকে পানি পড়ার কথা কত বার যে চিঠির মাধ্যমে হাসপাতাল পরিচালক ও সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে তার হিসাব নেই। পরিচালক বারবার সমাধানের কথা বলেছেন। কয়েকবার পানি পড়া বন্ধের কাজও করা হয়েছে। কিন্তু কাজ করে যাওয়ার পরদিনই আবার পানি পড়তে থাকে।

তিনি আরো বলেন, এটাতো বহু বছরের পুরাতন ভবন, তাই সংস্কার করলে এর কোনো সুফল মিলবেনা, পুনোরায় আবার পানির লাইন ভেঙ্গে নতুন করে করতে হবে বলেও তাদেরকে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক।

পিবিএ/জিজি

আরও পড়ুন...