কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা

মহাদেবপুরে মামাকে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দুলাল হোসেনের (৩০) বিরুদ্ধে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে মামাকে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিতে নিয়োগ নেয়ার অভিযোগে রাজশাহী দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তার নামে জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সরদার আবুল বাসার দুদকের ধারা ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ দন্ডবিধিতে মামলা দায়ের করেন। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সংরক্ষিত কোটায় ” উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা” পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আসামী দুলাল হোসেন উক্ত পদের জন্য ঐ বছরের ৮ নভেম্বর অতিরিক্ত পরিচালক ( প্রঃ ও পাঃ), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫ বরাবর আবেদন করেন । তিনি উক্ত পদের জন্য চূড়ান্ত নির্বাচিত হন । এরপর ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই দুলাল এর নামে সংরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা কৌটায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়। ১২ আগস্ট তিনি রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ে উক্ত পদে যোগদান করেন।

মামলার বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৫ সালে দাখিল এবং ২০০৯ সালে কৃষি ডিপ্লোমা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। সংরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগ লাভের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় হতে ইস্যুকৃত বর্তমানে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আলী মন্ডল, পিতা-মৃত মকিম উদ্দিন মন্ডল, সাং তুড়গ্রাম , ডাকঘর- বৈদ্যপুর, উপজেলা-মান্দা, জেলা-নওগাঁ এর মুক্তিযোদ্ধা সনদ অসৎ উদ্দেশ্যে আবেদনপত্রের সাথে দাখিল করেন। তিনি উক্ত পদে নিয়ােগ লাভের জন্য মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান, ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদ, মান্দা, নওগাঁ এর স্বাক্ষর জাল করে ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদ, মান্দা, নওগাঁ এর স্মারক নং-২১, তারিখ ০৫/০৬/২০১৩ খ্রিঃ মূলে একটি প্রত্যয়নপত্র দাখিল করেন। উক্ত প্রত্যয়নপত্রে তার মাতা দুলোতন বিবি কে তার দাখিলকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদে উল্লিখিত ব্যক্তি মো. ইব্রাহিম মন্ডলের জ্যেষ্ঠ কন্যা বলে উল্লেখ করা হয়। চেয়ারম্যান, ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদ, মান্দা, নওগাঁ কর্তৃক তার কার্যালয়ের স্মারক নং-৮৭/১৯, তারিখ ০৩/০৯/২০১৯ খ্রিঃ মূলে প্রেরিত পত্র অনুযায়ী ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদ, মান্দা, নওগাঁ এর স্মারক নং -২১, তারিখ ০৫/০৬/২০১৩ খ্রিঃ মূলে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ হতে কোন প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হয় নি।

ফলে অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আসামী দুলাল হোসেন সংরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী প্রাপ্তির জন্য প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভঙ্গ করে তার আপন মামা ইব্রাহিম আলী মন্ডলের মুক্তিযোদ্ধা সনদ অবৈধভাবে ব্যবহার করে এবং তার মাতা দুলোতন বিবিকে তার দাখিলকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদে লিখিতে ব্যক্তি মোঃ ইব্রাহিম আলী মন্ডলের জ্যেষ্ঠ কন্যা মর্মে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র তৈরি করে মো. ইব্রাহিম আলী মন্ডলকে তার (আসামীর) নানা সাজিয়ে সংরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে অবৈধভাবে নিয়োগ লাভ করেছেন। আসামী দুলাল হোসেন সংরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী লাভের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভঙ্গ করে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ১২/০৮/২০১৩ খ্রিঃ তারিখে চাকুরীতে যোগদানের পর হতে মে/২০১৯ পর্যন্ত মোট তের লক্ষ সাতাশি হাজার নয়শত চুরাশি টাকা বেতন ও ভাতাদি উত্তোলন করেছেন।

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায়ের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপরে একটা অভিযোগ আমার কছে এসেছে। বিষয়টা তদন্তাধীন আছে। আমি তদন্তাধীন কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতোমধ্যে দুদক রাজশাহী কার্যালয়ে সাক্ষাতকার দিয়েছেন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা দুলাল হোসেন। তদন্তে অভিযুক্ত প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজশাহী দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে মামাকে নানা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরি পাওয়ার প্রমান মিলেছে। সেই অনুযায়ী গত ২৫ ফেব্রুয়ারী দুদক রাজশাহী জেলা কার্যলয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

পিবিএ/ইউসুফ আলী সুমন/বিএইচ

আরও পড়ুন...