পিবিএ, ঢাকা : বাংলাদেশে ৯.৮ শতাংশ শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মলাভ করে। বিশ্ব গড় মাত্রার চেয়ে এটি প্রায় তিনগুণ। দেশের ২০টি হাসপাতালে জন্ম নেয়া নবজাতকদের বিষয়ে জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল ৩ মার্চ ‘বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) পরিচালিত জন্মগত ত্রুটির সার্ভিলেন্স ও গবেষণা প্রকল্প ‘নিউবর্ন বার্থ ডিফেক্ট (এন.বি.বি.ডি)’ নবজাতকের জন্মগত ত্রুটির ওপর তথ্য প্রকাশ করেছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রোভিসি অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ডা. সামসুল হক খান। সভাপতিত্ব করেন বিএমডিসির সভাপতি ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি নিউবর্ণ বার্থ ডিফেক্ট (এনবিবিডি) সার্ভেইলেন্স ইন বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা।
সাধারণত জন্মের সময় যদি শিশুর দেহের কোনো অঙ্গ অনুপস্থিত বা ত্রুটিপূর্ণ থাকে, তাহলে তাকে জন্মগত ত্রুটি বলে।সেমিনারে বলা হয়, পৃথিবীব্যাপী নবজাতকদের মাঝে জন্মগত ত্রুটির হার গড়ে প্রতি ১০০ জনে তিন থেকে ছয়জন (৩-৬%)। তবে বিএসএমএমইউ-তে পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে এ হার ২০১৯ সালে ছিল ৯.৮ শতাংশ। সারা বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জন্মগত ত্রুটির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বিশ্বে প্রতি বছর শুধু জন্মগত ত্রুটির জন্য জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে প্রায় তিন লাখ শিশু মারা যায়। শিশু মৃত্যুর এই প্রভাব সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোল (এসডিজি) এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেকাংশে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
জন্মগত ত্রুটির কারণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশিষ্ট প্রসুতি ও নবজাতক শিশু বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার রওশন আরা রেডিও তেহরানকে বলেন, অপরিণত বয়সের বিয়ে, গর্ভকালীন অবস্থায় পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, গর্ভাবস্থায় এমন কোন কোন ওষুধ সেবন করা যা ভ্রুণের জন্য ক্ষতিকর এবং ডায়াবেটিস বা দীর্ঘমেয়াদী কোন অসুখে আক্রান্ত আবস্থায় গর্ভধারন–এসব ত্রুটিপুর্ণ শিশু জন্ম দেয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিটি গর্ভধারন হতে হবে পরিকল্পিত এবং গর্ভধারনের পূর্বে ও গর্ভকালীন অবস্থায় কিছু দরকারী পরীক্ষা-নিরীক্ষা অবশ্যই করাতে হবে।
এখন পর্যন্ত জন্মগত ত্রুটি সম্পর্কে যেসব কারণ জানা গেছে, তার মধ্যে রয়েছে বংশগত, জিনগত, রক্তসম্পর্কীয় বিবাহ, খুব কম বা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ, অপুষ্টি এবং গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের ধূমপান ও মদ্যপান। এছাড়া মায়ের সংক্রামক রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত সমস্যা, খিঁচুনি, অপচিকিৎসা, তেজস্ক্রিয়তা, ভেজাল খাদ্যগ্রহণ, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ সেবন ইত্যাদি কারণেও শারীরিক বা মানসিক ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্ম নিতে পারে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভধারণের আগেই মা-বাবার শারীরিক অবস্থার পূর্ব ইতিহাস জেনে শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ভ্রূণের প্রথম ১২ থেকে ২২ সপ্তাহে ‘হাই রেজল্যুশন আল্ট্রাসনোগ্রামের’ মাধ্যমে বেশিরভাগ ত্রুটি বোঝা যায়। তাই এই সময়ে গর্ভবতী মায়েদের ‘অ্যানোমালি স্ক্যানিং’ করানো উচিত। এছাড়া জিনগত সমস্যা শনাক্ত করতে রক্ত পরীক্ষা এবং ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইড অ্যানালাইসিস’, ‘কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পল অ্যানালাইসিস’ ইত্যাদি এখন বাংলাদেশেই সম্ভব।
পিবিএ/জেডআই