পিবিএ ডেস্ক : পরপর কন্যা সন্তান জন্মাচ্ছিল। তাই একের পর এক তাদের খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে পাষন্ড বাবা-মাসহ পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে। গত রবিবার এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের হাওড়ার লিলুয়া এলাকার পশ্চিম ঘুঘুপাড়ায়। ঘটনাটি রবিবার সকালে ফাঁস হওয়ার পর এলাকার নারীরা ওই পরিবারের ওপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করেন। তারপর তারা পুলিশের হাতে অভিযুক্তদের তুলে দেন। খুনের অভিযোগে বাবা-মাসহ দাদা, দাদী ও এক পিসিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । অভিযুক্তরা হলেন সঞ্জয় গুপ্ত, তার স্ত্রী সঙ্গীতা গুপ্ত, সঞ্জয়ের বাবা অমরেন্দ্রনাথ গুপ্ত, মা আশা গুপ্ত ও দিদি পুনম বর্মা।
লিলুয়া থানা এলাকার শেষ প্রান্তে জয়পুর বিলের কাছে পশ্চিম ঘুঘুপাড়ায় টালির চালের দু’কামরা ঘরে বাবা-মা ও এক অবিবাহিতা বোনকে নিয়ে সস্ত্রীক বাস করতেন সঞ্জয়। পেশায় তিনি একটি ঢালাই কারখানার শ্রমিক। পরিবারের একমাত্র রোজগারের মানুষ তিনি। স্ত্রী সঙ্গীতা গৃহবধূ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে সঞ্জয় ও সঙ্গীতার একটি মেয়ে হয়। কিন্তু আড়াই মাস বয়সে শিশুটি মারা যায়। পরিবারের দাবি, মাথায় ঘা হয়ে শিশুটি মারা গিয়েছিল। এক বছর পরে ফের আর একটি কন্যা সন্তান হয়। তার যখন ছয় মাস বয়স, তখন পুত্র লাভের আশায় ফের অন্তঃসত্ত্বা হন সঙ্গীতা। কিন্তু ফের তার মেয়ে হয়।
পুলিশ জানায়, তৃতীয় কন্যা সন্তানটিও মাত্র আড়াই মাস বয়সে রহস্যজনকভাবে মারা যায়। পরিবারের দাবি, দেড় বছরের মেয়েটি তৃতীয় কন্যা সন্তানের মুখের উপরে বসে পড়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে সে মারা গিয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই কোনও চিকিৎসকের ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই স্থানীয় একটি মাঠে দু’টি শিশুকে মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয়।
পুলিশ জানায়, গুপ্ত পরিবারের তরফে চাপ ছিল একটি পুত্র সন্তানের। তৃতীয় সন্তানের মৃত্যুর এক বছর পরে ফের সন্তান সম্ভবা হন সঙ্গীতা। আড়াই মাস আগে তিনি আবার একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাতে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকার বাসিন্দাদের প্রথমে জানানো হয়, মুখে মায়ের হাত পড়ে যাওয়ায় শিশুটি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে। পরে আবার জানানো হয়, গলায় হাত পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে। আর এতেই বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। রবিবার সকালে এলাকার মহিলারা ওই পরিবারের ওপর চড়াও হন। তাদের অভিযোগ, চাপ দিতেই আসল কথাটা বেরিয়ে আসে। জানা যায়, বারবার মেয়ে হওয়ায় আগের দু’টি মেয়ে ও চতুর্থ কন্যাসন্তানকেও তারা খুন করে মাটিতে পুঁতেছেন। এ কথা জানার পরেই এলাকার ১৫-২০ জন নারী ওই পরিবারটিকে মারধর শুরু করেন। পুলিশ আসে। উত্তেজিত বাসিন্দাদের হাত থেকে বাঁচাতে ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে থানায় নিয়ে যেতে চায় পুলিশ। নারীরা পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাদের দাবি, আগে শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করতে হবে। তবে অভিযুক্তদের নিয়ে যেতে দেবেন তারা।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ঘুঘুপাড়ার ওই বাড়ির সামনে এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করেছেন। পুলিশ ঘিরে রেখেছে বাড়িটিকে। গুপ্ত পরিবারের প্রতিবেশী জয়শ্রী শী জানান, ‘ওই পরিবারের সঙ্গে পাড়ার কারও তেমন যোগাযোগ নেই। কিন্তু পরপর কন্যা সন্তান মারা যাচ্ছে দেখে সন্দেহ হয়। ওই দিন সকালে আমরা মেয়েরা গিয়ে চেপে ধরতেই আসল কথাটা বলে ফেলে।’ এলাকার যুবক বিশ্বনাথ সামন্ত বলেন, ‘এলাকার সকলের দাবিতেই পুলিশ শিশুর মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সুরতহাল করতে রাজি হয়।’ হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘মৃতদেহ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সুরতহাল করে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই ঘটনাটি পরিষ্কার হবে।’
পিবিএ/জিজি