পিবিএ ডেস্ক: করোনাভাইরাস, যার পোশাকি নাম কোভিড-১৯, রোগটিকে বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই রোগ শুরুতে নিরীহ। ধীরে ধীরে ভয়াবহ। নভেল করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশের অভিজ্ঞতাই এমন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, এক সময় বিজ্ঞানীদের কাছে অজ্ঞাত ছিল এই ভাইরাস। এর মধ্যেই এটি চীনে অনেক মানুষের ফুসফুসে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করেছে। এরপর তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ইতালিতে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শরীরের কোষগুলোতে প্রবেশ করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে কাজ করে করোনাভাইরাস, যার আনুষ্ঠানিক নাম সার্স-সিওভি-২। এটি নিশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করতে পারে (আশপাশে কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে) বা ভাইরাস সংক্রমিত কোনো জায়গায় হাত দেওয়ার পর মুখে হাত দিলে।
শুরুতে এটি গলা, শ্বাসনালী ও ফুসফুসের কোষে আঘাত করে এবং সেসব জায়গায় করোনার কারখানা তৈরি করে। পরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে দেয় এবং আরও কোষকে আক্রান্ত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯ রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো জ্বর, ক্লান্তি ও শুকনো কাশি। কিছু রোগীর শরীরে ব্যথা হয়, নাক বন্ধ হয়, সর্দি, গলা ব্যথা বা ডায়রিয়া হতে পারে। এই লক্ষণগুলি সাধারণত হালকা হয় এবং ধীরে ধীরে শুরু হয়।
ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচদিন সময় নেয়। কিছু লোক সংক্রমিত হয় তবে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং অসুস্থ বোধ করে না। বেশিরভাগ লোক (প্রায় ৮০%) বিশেষ কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সেরে ওঠে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা বোধ করে। বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা বা ডায়াবেটিসের রোগীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জ্বর, কাশি এবং শ্বাস নিতে সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের বিশেষ চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা নিজের অভিজ্ঞতা হিসেবে জানিয়েছেন, দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ইতালির গাভাটেসনি হাসপাতালের চিকিৎসক ড্যানিয়েল ম্যাককিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখা চিঠিতে করোনাভাইরাসে রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা এবং পরিস্থিতির এক হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন, যা থেকে ইতালির পরিস্থিতির ভয়াবহতা টের পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি লিখেছেন, ‘এই রোগ ফ্লুর চাইতেও ভয়াবহ। বিশ্বাস করুন, ফ্লুর চাইতে অনেক ভিন্ন রকমের অসুখ এটি। এই রোগকে দয়া করে তাই ফ্লু বলবেন না। জ্বর অসম্ভব রকমের বেশি। রোগীর দম এমনভাবে বন্ধ হয়ে আসতে চায়, যেন সে ডুবে যাচ্ছে। রোগীরা হাসপাতালে আসতে চায় না। শুধু একটু অক্সিজেন পাওয়ার জন্য তারা বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই রোগের বিরুদ্ধে খুব সামান্য কিছু ওষুধ কাজ করে। আমরা সাহায্য করার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু সব কিছুই নির্ভর করছে রোগীর অবস্থার ওপর।
পিবিএ/বিএইচ