করোনার ত্রাণ দূর্ণীতিবাজরা যেন করুণা না পায় !


শতাব্দী আলম : ‘কোনো রকম দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুঃসময়ে কেউ সুযোগ নিলে, কোনো অভিযোগ পেলে আমি কিন্তু তাকে ছাড়ব না।’ মানবতার জননী বাঙালির শেষ আশ্রয়স্থল বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালের শুরুতেই এমন হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

কিনতু প্রবাদ আছে ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’। তার কাছে করোনার ত্রাণই কি ? আর কাবিখাই কি ? সবইতো চাল। গণমাধ্যমে প্রকাশ সারাদেশে চাল আত্মসাতের প্রায় শতাধিক ঘটনা ঘটেছে । প্রশাসন উদ্ধার করেছে শত শত টন চাল ।

যদিও আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারনে এটা সীমা ছাড়ায় নি। বা দেশে দরীদ্র অসহায় মানুষ না খেয়ে আছে তেমন পরিস্থিতি হয়নি। আজ রাত সারে আটটার দিকে একজন ব্যবসায়ী আমাকে মুঠোফোনে বিষয়টি নিয়ে লিখার অনুরুধ করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ঔসব মানুষ কোনভাবেই মানতে পারছেন না এমন অমানবিক কাজ। তারমত জনসাধারণও বিশ্বাস করে এই ত্রাণ আত্মসাতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে অন্যদের শিক্ষা দেবার এটাই উপযুক্ত সময়।

ইতিহাস বলে, জাতির ক্রান্তিলগ্নে একজন দেশপ্রেমিকের পরিচয় মিলে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৭১ এ যেমন আমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযুদ্ধাদের পেয়েছিলাম।

এই করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশ মানুষের সবথেকে বড় বন্ধু। ত্রাণ আত্মসাতকারী আটক ও চাল উদ্ধারে পুলিশ কোন ছাড় দেয়নি। তারা অত্যন্ত দক্ষতা এবং দ্রুততার সাথে ত্রাণের চাল আত্মসাতকারীদের পাকড়াও করেছে। চালও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রশাসনও নিজেদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর। দেশের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা বা কর্মীবৃন্দও জানবাজি রেখে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের মত বৃহত দলে মুষ্টিমেয় কিছু দুর্নীতিবাজের কারনে মহত অর্জনে কালিমা লেপন মেনে নিতে অনেকেরই কষ্ট হচ্ছে।

প্রিয় পাঠক, কিছু ঘটনার উল্লেখ করলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে। ঘটনা-১ জামালপুরে ‘১২৬ বস্তা চালসহ জামালপুর সদর উপজেলার তুলশীচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওএমএস ডিলার তোফাজ্জল হোসেন তোফাকে আটক করেছে পুলিশ।’ ১১ এপ্রিল, পিবিএ। ঘটানা-২ এটিও জামালপুওে, ‘‘জামালপুরে দুই দিনে তিন অভিযানে আরো ৩৭ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে সকালে একই ইউনিয়নের চিকারপাড় গ্রামে অভিযান চালিয়ে কালোবাজারে পাচারের সময় ৮৫ বস্তা ও বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেলান্দহ উপজেলার চরবাণী পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বেতমারী গ্রাম থেকে দেড়টন চাল উদ্ধার করা হয়। ১০ এপ্রিল, পিবিএ।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম থেকে ১৫ বস্তা চাউল চুরি করার সময় পাবলিকের হাতে ধরা খেলেন গ্রাম পুলিশ (দাফাদার) রবিদাস চন্দ্র রায়। পিবিএ ১০ এপ্রিল।
যখন আমি লিখছিলাম তখন বেনাপোল থেকে আমার পিবিএ’র প্রতিনিধির কল আসে। তিনি নিউজ পাঠিয়েছেন, ত্রাণ বিতরণ নিয়ে এমপি আফিল উদ্দিন গ্রপ ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৮ জন আহত। নিউজটি প্রকাশের অপেক্ষায়।

তাছাড়াও মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে চাল আত্মসাতের ধুম পরেছে যেন। রংপুরের পূর্ব শালবন বোতলাপাড়া হতে, কিশোরগঞ্জের তাড়াইলসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে এমন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ, ভ্রাম্যমাণ আদালত উদ্ধার করেছে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ত্রাণ বিতরণে সমণ¦য়হীনতা এখন সকলের মুখে মুখে। নিলফামারির সৈয়দপুরে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে সড়ক অবরোধও হলো।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী। আপনি নিশ্চয়ই সবকিছু অবগত আছেন। আপনি নিশ্চয়ই ব্র্যাকের জরিপ লক্ষ্য করেছেন। বর্তমানে দেশের ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে খাবার নেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন বিশ্ব স্বীকৃত। গণমাধ্যমকর্মী হিসাবে এ কথা হলফ করে বলতে পারি উন্নয়ন পরিসংখ্যানের সাথে এই জরিপ কোনভঅবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, যেহেতু এখনো এই সমস্ত চাল আত্মসাতকারী আর দূর্ণীতিবিদদের দৌড়াত্ম বিদ্যমান। বিএনপি জামাতের দোসর দূর্ণীতিবাজ এরাই উন্নয়ন লুট করছে। সম্রাট, খালেদ, রুপনদের চক্র অনেক গভিরে বিস্তৃত। সুযোগ পেলেই যতটা না নিজেদের আখের গোছাতে দূর্ণীতি করে। তারচেয়ে বেশী আওয়ামী লীগের অর্জন ম্লাণ করাতেই এদের সুখ। বিদেশে পারি জমানো বিএনপি দোসরদের পথে পাচার করে। যে কারনে দেশে ভুখা নাঙা মানুষ দেখা যাচ্ছে।

আর যদি আপনার আদেশ উপদেশ এইসব নেতা আমলারা মেনে চলতো তাহলে দেশে ৪ ভাগ মানুষকেও ত্রাণ দেয়ার দরকার পরতো না। ভবিষ্যতে যাতে তেমন হয় সেজন্য এইসব চাল আত্মসাতকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।

বিশ্ব দরবারে আমরা বাংলাদেশী আজ মাথা উঁচু করে বলতে পারি। আমাদের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। সততা ও পরম সহিষ্ণুতার মাধ্যমে আমাদের এই অর্জন। ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দয়ায় পাওয়া না।’ তেমনি বলবো, ‘ঘাম দিয়ে গড়েছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সব অর্জনের মহানায়ক আপনি। আপনি মানবতার জননী। আপনি বিশ্ব জননী। বিশ্বাস করি আপনার মত মহান নেতৃত্বে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দূর্ণীতিমুক্ত হবে। মহান আল্লাহর রহমতে করোনাকাল দুর হবে। এই প্রত্যাসা।

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

 

আরও পড়ুন...