শেখ নাছির উদ্দিন, বেনাপোল(যশোর) : যশোরে মনিরামপুরের বাসুদেবপুর গ্রামের নার্সারি ব্যবসায় করোনার প্রভাব পড়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষ ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। চাড়া বিক্রি হচ্ছে না। নার্সারি মালিকরা চরম আর্থিক সংকটে রয়েছেন।
যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রাম বাসুদেবপুর। গ্রামের মেঠো পথ ধরে দুই ধারের জমিতে গাছের চারা আর চারা। দেশি-বিদেশি ফুল-ফল-ঔষধি গাছের চারায় ভরা দিগন্ত জোড়া মাঠ। গাছের চারার পরিচয়েই গ্রামটিতে ডাকা হয় ‘নার্সারির গ্রাম’ বলে। ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের দিন কাটে নার্সারিতে।
জানা গেছে, প্রায় দুই হাজার পরিবারের বসাবস বাসুদেবপুর গ্রামে। তার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ নার্সারি পেশায় জড়িত। এলাকাটি এরই মধ্যে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে নার্সারির কারণে। ওই গ্রামের প্রায় ২’শ একর জমিতে বছর জুড়েই উৎপাদন হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুল-ফলের চারা। যার বার্ষিক বাজার মূল্য প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা। এ গ্রামের চারা আশেপাশের জেলা তো বটেই, যাচ্ছে রাজধানীতেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নার্সারীর গ্রামেও করোনার প্রভাব পরেছে। সারাদেশে লকডাউন থাকায় চাড়া বিক্রি হচ্ছে না। এসব নার্সারির মালিকরা সমুহ বিপদের আশংকা করছেন। যদিও তাদের গাছের চাড়া নষ্ট হয় না। তবে কয়েকদিনের স্থলে যদি কয়েকমাস এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে সমস্যা হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, চৈত্রের প্রখর রোদে উজ্জ্বল বাসুদেবপুর গ্রামের প্রবেশের নতুন পিচঢালা পথটি। গ্রামের যে দিকে তাকানো যায়, শতশত একর জমি জুড়ে ছোট-বড় গাছের চারা। বেশিরভাগ ঘরবাড়ি নার্সারি ঘেরা। বর্ষায় নার্সারির কৃষকদের জন্য চারা পরিবহনের সমস্যা যাতে না হয়, সে কারণে সরকার রাস্তাটি পাকা করেছে। পিচঢালা রাস্তার দু’পাশে তাকালেই চোখে পড়বে শত শত নার্সারি। অনেক নার্সারিতেই এসেছে মৌসুমি ফলের ফুল। কিছু কিছু গাছে ধরে নানান রকমের ফলও। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে তরফদার নার্সারি। নার্সারির ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। কেউ চারা প্যাকেট করছেন, কেউ বা চারা সতেজ রাখতে ছিটাচ্ছেন পানি। কেউ আবার আগাছা পরিষ্কার করছেন।
তরফদার নার্সারিতে কাজ করছিলেন নার্সারির মালিক রিয়াজ উদ্দীন। তিনি জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে স্থানীয় মেম্বর মোহাম্মদ আলী বাসুদেবপুর গ্রামে এক বিঘা জমিতে চারা উৎপাদন করা শুরু করেছিলেন। তার সফলতা দেখে এখন এ গ্রামে শতাধিক চাষি কয়েকশ’ হেক্টর জমিতে চারা উৎপাদন করছেন। বাসুদেবপুর গ্রাম অনেকের কাছেই পরিচিত নার্সারির জন্য। যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসব চারা কিনে নেন। এলাকায় কেউ কেউ আবার ফেরি করে বিক্রি করেন। নার্সারির জন্য স্থানীয় একটি বাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দোকান। সেখানে নানা ধরনের গাছের চারা কলম করে বিক্রি করা হয়। ধান চাষের চেয়ে নার্সারিতে বেশি লাভ করছেন চাষিরা।
তিনি আরও জানান, করোনার প্রভাব নার্সারি ব্যবসায়ও পড়েছে। করোনার কারণে মানুষ ঘরবন্দি থাকায় চাড়া বিক্রি হচ্ছে না। এব্যপারে সরকারি সহযোগীতা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, এ অঞ্চলের বেশির ভাগ লোকই ধান-সবজি চাষ করতেন। বর্তমানে নার্সারি পেশায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন এ গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ। বর্তমানে বাসুদেবপুর গ্রামের শতকরা ৮০ ভাগ লোকই নার্সারি করেছেন। তিনি আরো বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা নতুন নতুন জাতের চারা উৎপাদনে তাদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া চারা বিক্রিতে ক্রেতাদের সাথে যেন প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া না হয়, সেই জন্য তদারকি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জান বলেন, লাভজনক হওয়ায় জেলায় অনেকেই নার্সারিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আমার কাছে অনেকেই আসেন নার্সারি করার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে। আমি তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।
পিবিএ/মোআ