পিবিএ, ঢাকা : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে লিয়াকত আলী লাকী আরও তিন বছরে জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেন।
তিনি মহাপরিচালক হিসাবে নিয়োগের পর ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল, ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ, ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ তাঁর চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিল সরকার। সর্বশেষ তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি মাসের ১০ তারিখে।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উপসচিব অলিউর রহমানের স্বাক্ষর করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে পরবর্তী তিন বছরের জন্য পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।
লিয়াকত আলী লাকী ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আগলা টিকরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ সাদেক আলী এবং মা মাজেদা আলী। লিয়াকত আলী লাকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে উচ্চাঙ্গ সংগীতে পাঁচ বছরের সার্টিফিকেট কোর্সও সম্পন্ন করেন তিনি।
১৯৮১ সালের ৬ জুলাই একদল শিক্ষিত তরুণ নিয়ে নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সালে পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের স্তিমিত শিশু নাট্যচর্চায় প্রাণপ্রাচুর্য সঞ্চার করে বিশ্ব নাট্য সভায় বাংলা শিশুতোষ নাটককে সম্মানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী।
প্রসঙ্গত, লিয়াকত আলী লাকী একাধারে নাট্যাভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, নাট্যকার, সংগীতশিল্পী, সুরকার, সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি অভিনয় করেছেন ৫৮টি নাটকে, নির্দেশনা দিয়েছেন ৭৮টি আর রচনা করেছেন ৮টি নাটক। নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে একুশে পদক লাভ করেছেন তিনি।
অভিনেতা হিসেবে লিয়াকত আলী লাকীর খ্যাতি আছে। ‘আ মিড সামার নাইটস ড্রিম’–এ নিক বটম, ‘অন্ধ নগরীর চৌপাট রাজা’য় গুরু, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’–এ পুলিশ অফিসার, ‘হেলেন’ নাটকে মেনেলাওস, ‘কঞ্জুস’–এ কালা মিয়া, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’তে হোসেন মিয়া, ‘টেম্পেস্ট’–এ ট্রিংকালো, ‘সোনাই মাধব’–এ ভাবনা, ‘সিদ্ধিদাতায়’ গুরু ও ‘লীলাবতী আখ্যান’–এ বরাহ চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দর্শকের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে।
লিয়াকত আলী লাকী বাংলাদেশের স্বকীয় ধারার অন্যতম নাট্য নির্দেশক। তাঁর নির্দেশিত ‘রথযাত্রা’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘বিধি ও ব্যতিক্রম’, ‘কঞ্জুস’, ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’, ‘হেলেন’, ‘সোনাই মাধব’, ‘সিদ্ধিদাতা’, ‘মহাপ্রয়াণ’, ‘মধুমালা’, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’, ‘মাঝরাতের মানুষেরা’ এবং শিশুদের নাটক ‘সংহার’, ‘ববি’, ‘তাসের দেশ’, ‘বাজাও বিশ্ববীণা’, ‘সিন্ডারেলা’, ‘আলীবাবা’, ‘রূপবদলের রূপকথা’, ‘লালু’, ‘আমাদের পৃথিবী’, ‘রাস্তার ছেলে’ প্রভৃতি নাটক বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে বিশেষমাত্রা যোগ করেছে।
তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে সহসভাপতি। ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ কেন্দ্রের প্রধান লিয়াকত আলী লাকী এশিয়ান রিজিওনাল কমিটির সহসভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ডাকসুর সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক লিয়াকত আলী লাকী ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিল্পী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দল প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। নবপর্যায়ে আবৃত্তি, পথনাটক ও গণসংগীত প্রসারের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা তিনি।
পিবিএ/ মোহাম্মদ আলম