পিবিএ, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : গত কয়েক মাসের তীব্র খরার পর অবশেষে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে দেখা মিলল কাঙ্খিত বৃষ্টি। তীব্র তাপ দাহ এবং খরার পর কাক্সিক্ষত বৃষ্টিতে চা বাগানগুলি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দুটি পাতা একটি কুঁড়িতে ছেয়ে গেছে পুরো চা বাগান। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ যেন সবুজের স্বর্গরাজ্য।
চা বিশেষজ্ঞরা এই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতকে চা বাগানের জন্য উপকারী বলে জানিয়েছেন।
এদিকে (covid-১৯) ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চা বাগানগুলো চালু রয়েছে, সংক্রমনের ঝুঁকি এড়াতে চা শ্রমিকদের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পাতা চয়নের কার্জক্রম চালানো হয়েছে যার ফলে হাজার হাজার কেজি চা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১ থেকে ২০এপ্রিল পর্যন্ত ১০৯ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুম জানান, চলতি বছরের ১ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানটি হলো- ৩ এপ্রিল ১৩ মিলিমিটার, ১২ এপ্রিল ৩ মিলিমিটার, ১৬ এপ্রিল ৯ মিলিমিটার, ১৭ এপ্রিল ৪৩ মিলিমিটার, ১৮ এপ্রিল ২৪ মিলিমিটার এবং ১৯ এপ্রিল ১৭ মিলিমিটার।
তিনি গত বছর ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের হিসাব উল্লেখ করে বলেন, ১ এপ্রিল ৩৯ মিলিমিটার, ২ এপ্রিল ৫ মিলিমিটার, ৩ এপ্রিল ৩০ মিলিমিটার, ৫ এপ্রিল ১ মিলিমিটার, ৯ এপ্রিল ১৮ মিলিমিটার, ১০ এপ্রিল ২৬ মিলিমিটার, ১৭ এপ্রিল ১ মিলিমিটারসহ মোট ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এ ছাড়া ২৯ এপ্রিল ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, প্রচন্ড খরা গেলো এবার। এবছর খরার পরে বৃষ্টিপাত শুরু হলো। এর ফলে প্রকৃতিতে পাতাগুলো আরো সবুজ হয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান ও ফিনলে টি কো¤পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো তার আপন সজিবতা ফিরে পেয়েছে। যেখানে আগে প্রায় চা গাছগুলোই শুকনো ছিল এখন সবগুলোই সবুজ হয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়; দু-তিনদিনের এই বৃষ্টিপাতের ফলে নতুন স্যুটিং (কুঁড়ি) বের হয়ে এসেছে; মাত্র তিন/ সাড়ে তিন ইঞ্চি বৃষ্টি পাওয়ার পর। আমরা এরই মধ্যে পাতা চয়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, এবার তীব্র খরা হয়েছে । আমরা প্রতিদিন চা বাগানের ইরিগেশন (সেচ) দিয়েও চা গাছগুলোকে শতভাগ রক্ষা করতে পারছিলাম না। এ ছাড়াও ইয়াং টি (নবীন চা) তে ইরিগেশনে দৈনিক খরচ হয় হাজার হাজার টাকা। এখন এই প্রাকৃতিক বৃষ্টি শুরু হওয়ার ফলে আমরা ইরিগেশন বন্ধ করে দিয়েছি । আপাতত ইরিগেশনের আর প্রয়োজননেই।
চা বাগান চালু রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত কে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতে এক মাস পরে তারা চা বাগানগুলো চালু করতে যাচ্ছে। এক মাসে তাদের যত ক্ষতি হয়েছে আমরা এই ক্ষতি থেকে পুরোপুরিভাবে বেঁচে গেছি।
চা বাগান বন্ধ হলে অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়তো আমাদের চা শিল্প। আমরা একমাস আগে যেটা বুঝেছি ভারত এখন সেটা বুঝতে পারছে। ইতোমধ্যে ভারতের চা বাগানগুলোতে এখন অতিরিক্ত বুড়ো হয়ে যাওয়া কুঁড়িগুলোকে কেটে কেটে ফেলে দিচ্ছে। ওই চা গাছগুলোতে আবার নতুন স্যুট (কুঁড়ি) আসতে ৪০ থেকে ৪৩ দিন সময় লাগবে। এভাবেই ভারত চা পাতা চয়নে প্রায় এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে গেলো। আমরা এদিক থেকে অ্যাডভানটেজ (উপকারিতা) পেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা চা শ্রমিকদের মধ্যে মাস্ক ও সাবান বিতরণ করে তার ব্যবহারের দিকে নজরদারী রাখছি এবং বিশেষ করে নারী চা শ্রমিকদের জন্য নিয়মিতভাবে সেকশনে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ তাদের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করিয়ে চা পাতা চয়নের কাজগুলো করিয়ে যাচ্ছি।
পিবিএ/ তোফায়েল পাপ্পু / মোআ