সামাজিক দুরত্ব না বাজায়, জনসমাগম সৃষ্টি

এদের বোঝাবে কে?

প্লাবন শুভ: করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মরণব্যাধি এক অভিশাপ। বিশ্বব্যাপী রূপ নিয়েছে রণক্ষেত্রের। এ রণক্ষেত্রে নেই কোন অস্ত্র কিংবা নেই কোন দেশের সাথে কারো দাঙ্গা। এ রণক্ষেত্র অদৃশ্য এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে রণক্ষেত্র। এখানে বিশ্ব থমকে পড়েছে। ক্ষমতাশালী দেশগুলো আজ কুপোকাত। বাংলাদেশও এর বাহিরে নেই। বাংলাদেশ ঘনবসতী দেশ। যার আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। এদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বসবাস। এদেশে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চতকরণ খুবই দুষ্কর। কিন্তু দেশের ক্রান্তিলগ্নে ও নিজেরসহ অপরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘরে থাকলেই সম্ভব। সকলকে ঘরে থাকার জন্য সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশিপাশি জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, স্বাস্থ্য কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

বড় বড় দেশ, যেখানে উন্নত স্বাস্থ্যচিকিৎসা রয়েছে। সে দেশগুলোর মানুষই ঘরে থাকছেন। স-স দেশের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছেন। ওই দেশগুলো পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের দেশের কেউ কি মানছে সে নির্দেশ? কেউ কি বুঝছে পরিস্থিতি কতোটা ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে? আসলে আমরা কি বুঝি কম? না কম বুঝি না! আমরা বুঝি ঠিকই তবে আমরা অতি উৎসাহী প্রকৃতির মানুুষ। আমাদেরকে ঘরে বেঁধে রাখা দায়। আমরা আমাদের বীরপুরুষ ভাবি। আমরা মনে করি আমাদের আবার কি হবে! আমরা তো কোন রোগীর কাছে যাচ্ছি না। এগুলো ভেবেই দেদারসে ঘরে বেড়াচ্ছি নিজের মতো হাট-বাজার কিংবা গ্রাম-গঞ্জে। সকলের সংস্পর্শে আসছি। চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি আড্ডা দিচ্ছি। একবারো ভাবছি না এ অদৃশ্য প্রাণঘাতী ভাইরাস আমাদের চারিপাশেই মৃত্যুর বরণডালা সাজিয়ে বসে আছে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথম থেকেই দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, এনজিও কর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও এলাকার সচেতন লোকগুলো কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের সচেতন করছেন। আমাদের ঘরে রেখে তারা সেবা প্রদান করছেন। আমরা বুঝছি না।

কিছু কিছু মানুষ আছেন, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ প্রশাসনের গাড়ি দেখার জন্য দৌঁড়ে বাহিরে বের হচ্ছেন। আর কিছু মানুষ আছেন যারা প্রতিনিয়ত বাড়ির বাহিরেই থাকছেন। বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘটচ্ছেন সমাগম। অহেতুক এদিক থেকে ওদিক ঘোরাফেরা করছেন। বাদ নেই মহিলারাও তারা বাড়ির বাহিরে বের হয়ে দলবদ্ধ হয়ে জমিয়ে তুলছেন গল্পের আসর। নারী-পুরুষ উভয়ে খেলছেন চোর পুলিশের ধরপাকার খেলা। প্রশাসন-সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ সদস্যদের দেখছে লুকিয়ে যাচ্ছেন। ধরা পড়লে দেখাচ্ছেন বিভিন্ন অজুহাত।
প্রশ্ন এ সমাজের কাছে, এদের বোঝাবে কে? কেনো এরা বাড়ির বাহিরে? কেনো মানছেন না নির্দেশনা? কেনো হয়রানী করছেন প্রশাসন-সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ সদস্যদেরকে? তাদের কি বিবেক বুদ্ধি নাই? এদেরকে বুঝিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা। আসলে একটা চলমান প্রবাদবাক্য আছে, ‘গণ্ডারের চামরায় কথা লাগে না’। ঠিক কি তাদের চামরাও গণ্ডারের মতোই?

আসুন সচেতন হই। নিজের জিবনের দাম না দিলেও মানুষের জীবনের সাথে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করি। আমরা তো জানি এ রোগ সংক্রমিত হয় সংস্পর্শের মাধ্যমে। তবে কেনো নিজেরসহ পরিবার ও প্রতিবেশিদের জেনে বুঝে মৃত্যু ডেকে আনছি কেনো? যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে তাদের সহযোগিতা করি। তাদের কোনকিছুর বিনিময়ে সহযোগিতা করতে হবে না। ঘরে থাকুন, তাহলেই হবে। আমরা ঘরে থাকলেই আমরা নিরাপদ থাকবো, আমাদের পরিবার নিরাপদ থাকবে, আমাদের চারিপাশ নিরাপদ থাকবে, আমাদের দেশ নিরাপদ থাকবে। #

লেখক : প্লাবন শুভ, শিক্ষার্থী, কলামিষ্ট ও গণমাধ্যমকর্মী

আরও পড়ুন...