রাজন্য রুহানি, জামালপুর : ‘সৎমা রেগে আমার গলা চেপে ধরলে আমি চিৎকার করি। তখন তিনি লোহার শেকল দিয়ে আমার হাত-পা বাঁধেন। তালা মারেন। তারপর সৎমা ও সৎ ভাইয়েরা মিলে অনেক মেরেছে। সারারাত কিছুই খেতে দেয়নি। যদি কাউকে কিছু বলি তাহলে আমাকে বস্তার মধ্যে ভরে পানিতে ফেলে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তারপর আমি শেকল বাঁধা অবস্থাতেই পালিয়ে ফুপুর বাড়িতে চলে আসি।’
হাতে শেকলসুদ্ধ ওই তালা নিয়েই চেয়ারে বসে শিশুটি কেঁদেকেঁদে এভাবেই বলল ঘটনাটি।
বৃহস্পতিবার ২৩ এপ্রিল ভোরে শেকলসহ তার ফুপুর বাড়িতে পালিয়ে আসে। ফুপু সেলিনা বেগম সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের ডিক্রিরবন্দ এলাকার আব্দুল বারিকের স্ত্রী। সৎমার নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে ওই শিশুটি এতটা পথ পায়ে হেঁটে একাই এসেছে।
ওর বয়স মাত্র ১০ বছর। মাকে তালাক দেবার পর সৎমা ও ভাইদের ফাইফরমাস খেটে তার দিন কাটতো। স্কুলেও যেতে দিতো না। সারাদিন কাজ করাতো। এসব দেখেও না দেখার ভান করতো বাবা। আমি মায়ের কাছেও যেতে পারি না।
ফুপুর বাড়িতে এসে শিশুটি এভাবেই অনুযোগ করলো। অভিযোগ করলো তার সৎমা ও সৎভাইদের বিরুদ্ধে। সে আর ওই বাড়িতে ফিরতে চায় না। সে পড়তে চায়।
শিশুটি জামালপুরের সরিষাবাড়ীর পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া একুশের মোড় এলাকার ছলিম উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলামের কন্যা।
রফিকুল ইসলাম দু’টি বিয়ে করেন। কয়েক বছর আগে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হয়। ওইপক্ষের ১০ বছর বয়সী একটি কন্যা (অঞ্জনা) তার বাবার কাছেই থাকেন। বুধবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে রফিকুলের প্রথম স্ত্রী ও শিশুটির সৎমা বকুল বেগম (৪০) তাকে রান্নার লাকড়ি কুড়িয়ে আনতে বলেন। শিশুটি দ্বিমত করায় হাতের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে মারধর করেন। সৎমার সাথে কিলঘুষি ও লাথি মারেন সৎভাই রতন, মনি ও বিপুল। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শিশুটি বৃহস্পতিবার ভোরে শিকলসহ পালিয়ে ডোয়াইল ইউনিয়নের ডিক্রিরবন্দ তার ফুপু সেলিনা বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নিলে তার হাত-পায়ের শেকল হক্সোব্লেড দিয় কেটে দেয় ওই বাড়ির লোকজন। শিশুটির ফুফা আব্দুল বারিক পিবিএ’কে জানান, শিশুটি আসার পর তার শেকল কেটে খাবার দেওয়া হয়। বর্তমানে সে তার আশ্রয়ে আছে।
শিশুটির বাড়িতে গিয়ে তার বাবার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত মা বকুল বেগম নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে পিবিএ’কে বলেন, ‘মেয়টি পাগল ও দুশ্চরিত্রা, তাই তাকে একটু গালাগাল করা হয়েছিল।’ শেকল দিয়ে তালাবন্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওর মাথায় ছিট আছে। ভাংচুর করে। তাই শেকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখেছিলাম।’ তবে শিশুটির ফুপু বলেছেন, ও সম্পূর্ণ সুস্থ একটা মেয়ে। ওর কোনো অসুখবিসুখ নেই।’
ঘটনাটির বিষয়ে তারাকান্দি তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোহব্বত কবীর পিবিএ’কে বলেন, ‘ বিষয়টি জানি না। শিশু নির্যাতনের কোনো অভিযোগও পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পিবিএ/রাজন্য রোহানি/এমএ