আখাউড়ায় ব্লাস্ট রোগে দিশেহারা কৃষক

পিবিএ,আখাউড়া: আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ফসলে ছত্রাকজনিত নেক ব্লাস্ট আক্রমন দেখা দিয়েছে। ইরি-বোরো ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। এ মৌসুমে ধানের ভাল ফলন দৃশ্যমান হলেও ধান কাটার পূর্বমুহুর্তে ফসলে রোগের আক্রমনে ধানের শীষ মরে যাচ্ছে। এতে ব্যাপক ফলন হ্রাসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়,ইরি বোরো মৌসূমে পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বি-আর ২৮, বি-আর ২৯, হীরা জাগরনীসহ উচ্চ ফলনশীল জাতের বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ করা হয়। যথা সময় মনিটরিং , পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবারের ফসলের ভাল ফলন হয়। তবে বৈশাখীঝড়, শিলাবৃষ্টি ও ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ফসলের ক্ষতি হয়।

সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম উপজেলার ছয়ঘরিয়া, রাজেন্দ্রপুর, জয়নগর, ছয়ঘরিয়া, কর্ণেল বাজার, আইরল গিয়ে দেখা যায় বেশ কিছু জমিতে ছত্রাকজনিত নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমন দেখা দিয়েছে। তবে আক্রান্ত হওয়া জমিগুলোতে পাকা ধান দেখা গেলেও মূলত ধানে কোন ক্ষির নেই। ধানের শীষগুলো শুকিয়ে চিটা হয়ে আছে। ক্ষির ছাড়াই ধানগুলো এক প্রকার দাঁড়িয়ে আছে। ফলে এ মৌসুমে স্থানীয় কৃষকরা জমি চাষ করে ক্ষতির সম্মখিন হয়েছেন।

মো. তোতা মিয়া,সিরাজ মিয়া, মো. শহীদ মিয়া, সিরাজুল ইসলাম মো. কুদ্দুস মিয়াসহ একাধিক কৃষকরা জানায়, সঠিক সময়ে চারা রোপন, সেচ ও সার দেয়াসহ যতœ নেন তারা। জমির অবস্থা ভাল দেখে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় স্বস্তি ফিরে আসছিল । কিন্তু ধানের ছরা বের হওয়ার পর বৈশাখীঝড়, শিলাবৃষ্টি হয়। এরপর ধান গাছের পাতাগুলো বাদামি আবার কখনও সাদা বর্ণের হওয়া শুরু করে ফসলের ক্ষতি হয়।

কৃষি অফিসের পরামর্শে জমিতে ছত্রাক নাশক ওষধ প্রয়োগ করলেও কোন কাজ হয়নি বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানায়। পৌর শহরের তারাগন এলাকার কৃষক মো. সিরাজ মিয়া বলেন এ মৌসুমে ১৫বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। কোথাও কোথাও জমিতে ব্লাস্ট রোগে আক্রমন দেখা দেয়। লম্বাশীষ হলে বের হলে ও গোড়া থেকে ক্ষতি হওয়ায় ধানের শীষ মরে সাদা হয়ে গেছে। দুর থেকে জমিতে ধান পাকা দেখা গেলেও কাছে গেলে দেখা যায় ধানে ক্ষির নেই। শীষগুলো শুকিয়ে এক প্রকার চিটা হয়ে যাওয়ায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। কি ভাবে ধার দেনা পরিশোধ করব বুঝতে পারছিনা।

মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক কষ্টে ৬ বিঘা জমি আবাদ করা হয়। সম্প্রতি শিলাবৃষ্টির পর কিন্তু আমার বেশীভাগ জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। ধার দেনা করে জমি চাষ করেছি। এখন কি ভাবে ওইসব ধার দেনা পরিশোধ করব তা বুঝতে পারছিনা। ু

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বি ২৮ ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষগুলো চিটায় পরিণত হয়। ধানের শীষগুলো দুধাবস্থায় পরিণত হওয়ার পর দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগ প্রতিরোধে কৃষকদেরকে প্রতিনিয়ত ওষধ ব্যবহারে পরামর্শ দেওয়া হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্ত শাহানা বেগম বলেন, পৌর শহরসহ উপজেলার সর্বত্রই পুরুদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে বি ২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপে বিক্ষিপ্তভাবে ফসলের কিছু ক্ষতি হয়। তবে সর্বপরি আবহাওয়া অনুকুল ও পরিচর্যার কারনে চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
পিবিএ/কাজী সুহিন/এএম

আরও পড়ুন...