পিবিএ,ঢাকা: করোনা মোকাবেলায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে , হাসপাতালের যে ব্যবস্থা সেটা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না, একে্বারেই অপ্রতুল ব্যবস্থা। ডাক্তার সাহেবরা আক্রান্ত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি, সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন, পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে যারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছিলো। আজকে সাংবাদিক বলেন, ডাক্তার বলেন, নার্স বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেন কেউই বাদ পড়ছে না। সরকার সেই দিকে কোনো কার্য্করী ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেননি এখন পর্যন্ত। বরং যেসব সিদ্ধান্ত তারা নিচ্ছে সেই সিদ্ধান্তগুলোর প্রতিটি সমন্বয়হীনতা রয়েছে, যার ফলে কখনোই কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বলেই গোটা দেশে আরো ভয়াবহ দুযোর্গের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই তারা একেক সময়ে একেক তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার সকালে রাজধানীতে উত্তরার দক্ষিনখানে প্রেম বাগানে সামনে বিমানবন্দর থানা বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে রমজান উপলক্ষে দুঃস্থ ও দরিদ্রদের মধ্যে উপহার সামগ্রি বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, মানুষের মধ্যে আশার সৃষ্টির করার ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হয়েছে। তারা আজকে তারা একেক সময় একেকটা তুঘলকি সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নিলো যে, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ করলো কিন্তু দুইদিন পরে গণ-পরিবহন খোলা রাখলো। ফলে সব কিন্তু গ্রামের মধ্যে দেশের মধ্যে সারা জায়গায় ছড়িয়ে পড়লো। এই বিষয়গুলো আজকে আপনার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
‘আবার আজকে গার্মেন্টস খুলেছে, কিন্তু গার্মেন্টস কর্মৗদের যে নিরাপত্তা সেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। গার্মেন্টস কর্মীদের এখন আবার অনেকেই আক্রান্ত হওয়া শুরু হয়েছে ঢাকার সাভারে, আসুলিয়ায়, গাজীপুরে নারায়নগঞ্জে। অর্থাৎ সরকার ব্যর্থ হয়েছে গার্মেন্টস মালিকদেরকে তাদের শ্রমিকদের পর্যাপ্ত পরিমান নিরাপত্তা গ্রহন করার ক্ষেত্রে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি সরকারকে বার বার বলেছি যে, আপনারা সবাই নিয়ে এক সাথে আলোচনা করে, পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন। তারা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করছেন না এবং তারা সেই এক সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ বা যারা এক্সপার্টস আছেন তাদের কারো সাথে পরামর্শ করে এই কাজগুলো করছেন না।”
‘আজকের এই দুঃসময়ে আমি কোনো সমালোচনা করতে চাই না। শুধু যে ক্রটিগুলো, যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি। আমরা মনে করি যে, এই ত্রুটিগুলো দেখে মানুষকে এক করে, সবাইকে একত্রিত করে, ঐক্যবদ্ধ করে সকল মানুষকে নিয়ে আজকে এই দুযোর্গ মোকাবেলা করতে হবে’
এ সময়ে একাদশ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী মহানগর উত্তর যুব দলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, বিমান বন্দর থানা বিএনপির জুলহাস মোল্লা, মুনির ভুঁইয়া, পূর্ব বিমান বন্দর থানার এস আই টুটুল, স্থানীয় যুব দলের দেলোয়ার হোসেন সবুজ, আলমগীর হোসেন, স্থানীয় কমিশনার আলী আকবর, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল পিপিই পরিধান করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুঃস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
মির্জা আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে এই অসুখ থেকে বাঁচার জন্য। কি দুর্ভাগ্য আমাদের যে সরকার যাদের থেকে মানুষ আশা করে যে দুযোর্গের দিনে, দুঃসময়ের দিনে তারা সঠিক পথ দেখাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার আমাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে পারেনি।”
‘এই সরকার যেহেতু জনগনের জন্য নির্বাচিত নয়, জনগনের দ্বারা নির্বাচিত নয়, জনগনের কাছে তাদের কোনো রকমের কোনো জবাবদিহিতা নাই। সেই কারণে প্রথম দিকে মার্চ পর্যন্ত তারা এটাকে অবহেলা করেছে এবং অবহেলা এমন পর্যায়ে করেছে যে এটাকে তারা গুরুত্বই দেয়নি। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যখন লকডাউন ঘোষণা করেছে তখন এরা কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করেনি, স্থানীয়ভাবে লকডাউন দিচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয়ভাবে কোনো লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি। যার ফলে মানুষ এটার গুরুত্ব সেভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা দেখেছি ত্রাণ বিতরণ যেটা মানুষের এই দুঃসময়ে কাছে পৌঁছানোর কথা সেই কাজটা কখনো সরকার সঠিকভাবে করতে পারছে না বলেই আজকে এতো অভাব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এপ্রিলের ৪ তারিখে সরকারকে একটা প্রস্তা্ব দিয়েছিলাম যে এই সাধারণ মানুষ যারা আছে যারা এখন কাজ করতে পারবে না তাদেরকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য তিন মাস আমরা দেয়ার জন্য বলেছিলাম। এগুলো স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে তালিকা করে সেনা বাহিনীর মাধ্যমে বিতরণ করা যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সরকার এটা কেয়ারই করেনি, গায়েই লাগা্য়নি’
মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি আমরা অত্যন্ত দুঃসময়ে অতিক্রম করছি। এই দুঃসময়েও আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে প্রতিটি জায়গায় আমাদের সাধ্যমতো যতটুকু আমাদের সম্পদ আছে তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আমরা প্রথম দিকে মানুষকে সচেতন করার জন্য লিফলেট বিলি করেছি, মাস্ক বিতরন করেছি এর পরে আমরা উপহার নিয়ে এই রোজা মাসে আমরা চেষ্টা করছি সমগ্র দেশেই যতটুকু সম্ভব মানুষের কাছে দাঁড়ানোর জন্য।
‘আমি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বলব, যারা বিত্তশালী ব্যক্তি আছেন এলাকাতে, দেশে তাদের প্রতি অনুরোধ জানাব যে, আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন এভাবে যেন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াতে পারি যারা এখন অত্যন্ত দুঃসময় কাটাচ্ছেন’
গুলশানের নিজের বাসায় কোয়ারে্নটাইনে থাকা অসুস্থ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনগনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি বাসাতেই আছেন। তিনি বেরুতে পারছেন না কারণ তাকেও কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। তিনিও আপনাদের কাছে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং আল্লাহতা‘লার কাছে দোয়া করেছেন তিনি যে, এই দুযোর্গ থেকে আমাদের সবাইকে রক্ষা করেন’
‘‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহোদয় প্রতিদিন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, আমাদের নেতৃ্বৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কোথায় কে যাবে না যাবে, কোথায় কে কি করবে সেগুলো নির্দেশ দিচ্ছেন। আসুন আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য এই দোয়া করি- আল্লাহ‘তালা যেন এই দুযোর্গ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করেন, পৃথিবীর মানুষকে রক্ষা করেন।”
গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত এবং তাদের চাকুরির নিশ্চয়তা বিধান এবং হাসপাতালের চিকিতসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী ও শিল্পকারখানার শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত না করা দাবিও জানান মির্জা আলমগীর।
পিবিএ/এমআর