“করোনার তথ্য-উপাত্ত না দিয়ে প্রতারণা করছে সরকার”

পিবিএ,ঢাকা: করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে গার্মেন্টস খুলে দিয়ে সরকার ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আক্রান্ত, সুস্থ এবং মৃত্যুর যে ডাটাগুলো দেয়া হচ্ছে, আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের কোনো মানুষ তা বিশ্বাস করে না। দুর্দিনেও সরকার জনগণকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’

বুধবার (৭ মে) দুপুরে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মাঝে পিপিই বিতরণের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আজকে সরকারের তরফ থেকে যে আক্রান্ত, অসুস্থ, সুস্থ এবং মৃত্যুর যে ডাটাগুলো দেয়া হচ্ছে, আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের কোনো মানুষ তা বিশ্বাস করে না। এটা বিজ্ঞানের কথা। সংক্রমণ যখন বাড়ছে, উপর দিকে যাচ্ছে। তখন মৃত্যু ২/৩/৪-এ এসে পৌঁছেছে। অথচ সেদিনই আপনার ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক বলছেন, আমার এখানে ৩১ জন মারা গেছেন, কয়েকজনের ডায়াগনোসিসে করোনা পজিটিভ হয়েছে, বাকিদেরটা আমরা এখন পর্যন্ত টেস্ট করিনি। আমাদের কাছে তথ্য হচ্ছে, টেস্ট করা হয় না, নির্দেশটা হচ্ছে টেস্ট করতে মাঝে মাঝে।’

ফখরুল বলেন, ‘এটাকে কি সরকার বলবেন আপনারা? যাদের এতটুকু দায়িত্ববোধ নেই, যারা চরম দুর্দিনেও জনগণকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া কী বলব আমরা?’

তিনি বলেন, ‘আজকে প্রশ্ন হচ্ছে জীবনের, প্রশ্ন হচ্ছে- নাথিং ইজ মোর প্রেসাইজ দেয়ার লাইফ। আর এরা খুলে দিয়েছেন শপিংমল। কেন ঈদের বাজার করতে হবে, আর অর্থনীতিকে চালু রাখতে হবে? এতদিন কী করলেন? এই যে মধ্যম আয়ের দেশে চলে গেলেন, বিশ্বের মধ্যে আপনার অর্থনীতি রোল মডেল। কেন বর্তমান অবস্থাকে ধারণ করার মতো শক্তি এই ইকোনমির তৈরি হয়নি? কারণ আপনারা পুরোটাই মিথ্যা কথা বলেছেন, মানুষকে প্রতারণা করেছেন, ভুল বুঝিয়েছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। যখন স্বাভাবিক অবস্থা ছিল, তখনও ব্যর্থ হয়েছেন। আজকে যখন যুদ্ধাবস্থা বলা যেতে পারে চরম দুর্যোগ-মহামারি, সেই সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি, তখন আপনি সেটাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন যে কোনো দরকার নেই।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব অত্যন্ত সুবেশী এবং টিপটপ জেন্টেলম্যান (ভদ্রলোক)। তিনি সুযোগ পেলেই বিএনপিকে আক্রমণ করেন এবং তার সুন্দর সুললিত ভাষায় সেই আক্রমণগুলো করেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটা কথা বলতে চাই, আপনি যে কথাগুলো বলেন, সেটা পরে আবার শোনেন কি বলেছেন? শোনা উচিত এজন্য যে, তাহলে নিজেই বুঝবেন, জনগণ আপনার কথা বিশ্বাস করছে না এবং এই কথাগুলো সঠিক নয়।’

তৈরি পোশাক কারখানাসমূহ খুলে দিয়ে সরকার ক্ষমাহীন অপরাধ করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আজকে প্রতিটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। এই যে গার্মেন্টসগুলোকে ওনারা (সরকার) খুলে দিলেন, গার্মেন্টস খুলে দিয়ে কী করলেন? বাইরের এলাকাগুলো থেকে সব চলে আসল, যারা সংক্রমিত হয়ে চলে গিয়েছিল আবার সংক্রমিত হয়ে ফেরত আসল। আজকের পত্রিকায় নিউজ আছে যে, কুমিল্লায় সংক্রমিত হয়ে গেছেন তিন দিন আগে, তাকে তার বাসায় ঢুকতে দেয়নি তার সন্তান-স্ত্রী, তার বোনের বাসা গেছেন, সেখানে সে মারা গেছেন।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এই যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে তারা (সরকার) গোটা জাতিকে ঠেলে দিচ্ছেন- এটা আসলে ক্ষমাহীন অপরাধ। আমি তো মনে করি যে, দিস ইজ এ ক্রিমিনাল অফেন্স। এই ধরনের ভুল, এটা ভুল নয়, এগুলো হচ্ছে ক্রিমিনাল অফেন্স। এ দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। জীবনের অধিকার তাদের ফান্ডামেন্টাল রাইট টু লিভ (বাঁচার মৌলিক অধিকার)। সেই জায়গায় তারা আঘাত করছেন, অর্থাৎ ইউ হ্যাভ নট রাইট টু লিভ টু ডায়িং। কিচ্ছু যায় আসে না। অবস্থাটা আজকে সেরকম হয়ে গেছে।’

করোনাভাইরাস নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেখুন, গণমাধ্যমের যারা সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশ করছেন তাদের কী অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় ছাঁটাই হয়ে গেছেন এই দুঃসময়ে, অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন-টেতন বন্ধ হয়ে আছে তিন মাস যাবত। সেখানে কিন্তু সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই। এই যে সরকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, যেটাকে আমরা বলেছি যে পুরোটাই শুভঙ্করের ফাঁকি। সেই প্রণোদনাতে সাংবাদিকদের কথা কিছুই বলা নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি এই সভা থেকে আহ্বান জানাব, সংবাদমাধ্যমের যারা মালিক আছেন তারা দয়া করে সংবাদকর্মীদের বেতন পরিশোধ করবেন, কাউকে চাকরিচ্যুত করবেন না এই দুর্দিনে এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। সরকারের প্রতি পরিষ্কার আহ্বান, অবিলম্বে সকল গ্রেফতারকৃত সাংবাদিকদের মুক্তি দিন।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যবস্থাপনায় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিই) প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। পরে রিপোর্টারদের হাতে পিপিই তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সহসভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও আতিকুর রহমান রুমন উপস্থিত ছিলেন।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...