আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন

পিবিএ,ডেস্ক: আজ পঁচিশে বৈশাখ, বাংলা সাহিত্যের অসাধারণ ও বহুমুখী প্রতিভা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০তম জন্মদিন।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাইশে শ্রাবণ। রবীন্দ্রনাথ আমাদের পঁচিশে বৈশাখ। বাংলা ক্যালেন্ডারের দু’টো স্মরণীয় দিন। বাইশে শ্রাবণ কবির প্রয়াণতিথি, পঁচিশে বৈশাখ জন্মতিথি। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে (৭ মে, ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ক্ষণজন্মা এই মানুষটির জন্ম হয়।

জন্মদিনের আড়ম্বর নিয়ে কবি নিজেই ১৩৪৩ সালে প্রবাসী পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘খ্যাতির কলবরমুখর প্রাঙ্গণে আমার জন্মদিনের যে আসন পাতা রয়েছে সেখানে স্থান নিতে আমার মন যায় না। আজ আমার প্রয়োজনে স্তব্দতায় শান্তিতে।’
বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি, গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন এবং ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ডে যান। কিন্তু সাহিত্যচর্চার প্রতি অধিক আগ্রহের কারণে তার আর ব্যারিস্টারি হয়নি। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীত রচয়িতা, সুর¯্রষ্টা, গায়ক, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। সৃষ্টিশীলতার সমান্তরালে তিনি ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি ও সমাজভাবনা সমানভাবেই চালিয়ে গেছেন। বিশ্বভারতী তাঁর বিপুল কর্মকান্ডের একটি প্রধান কীর্তি। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়।
তার ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ এবং অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয় এবং সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫ টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ভ্রমণকাহিনীর এক বিশাল ভান্ডার।

অনেকেই মনে করেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতেই মূলত সার্থক বাংলা ছোটগল্পের সূত্রপাত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও বিহারীলালের লেখনীর মাধ্যমে বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সূচনা হলেও রবীন্দ্রনাথের হাতেই তা পূর্ণতা পায়। একইভাবে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে জন্ম নেওয়া বাংলা গদ্যকেও তিনি চূড়াস্পর্শী সাফল্য দান করেন।

গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী তিনিই প্রথম এশীয় ও একমাত্র বাঙালি লেখক।

তিনি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডে প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা, চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব-ভাষা-ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা রবীন্দ্র কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য। তার গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতীয় ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।
রবীন্দ্রসাহিত্য, বিশেষত তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি রবীন্দ্র সংগীত বাঙালির কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে দেখা দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। তার অনেক গান অনুপ্রাণিত করে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর তাঁর গানই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ বাংলা ও বাঙালির অহংকার। অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে তিনি বিস্তৃত করেছেন বাংলা সাহিত্যের পরিসর, সম্প্রসারিত করেছেন বাঙালীর ভাব জগত। অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে, জীবন-সংগ্রামের প্রতিটি ক্রান্তিকালে আমাদের পাশে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। তাই, এই করোনাকালেও রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কবির জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় ভাবে উন্মুক্তস্থানে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে না। তবে, সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশনে কবির স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে।
পিবিএ/এএম

আরও পড়ুন...