দেড় মনের টাকায় ১ জন শ্রমিক কৃষকের মুখে হাসি নেই

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট’সহ ১০ জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। এখানে বর্তমানে দেড় মন ধানের টাকায়ও ১ জন শ্রমিক মিলছে না।

যে ধানকে ঘিরে কৃষকের বেঁচে থাকার স্বপ্ন ও আশা। সেই মাঠ ভরা ধানই এখন তাদের ঘাড়ের বোঝা হয়ে দাঁড়িছে। শুক্রবার দুপুরে এমনটাই জানিয়েছেন এ সদর উপজেলার বেশ কয়েকজন ধান চাষি।

কুরমনি গ্রামের ধান চাষি খোকন রানা, রঞ্জন বসু, মুন্না শেখ, সুধাংশু মন্ডল, সুমন ফরাজী, পাটরপাড়ার ইউনুস বিশ্বাস, শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত ও ডুমুরিয়ার বিপ্লব বাড়ৈসহ অনেক কৃষক জানান, এ উপজেলায় এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ভরা মৌসুম চলছে। প্রতিবছর বিভিন্ন অঞ্চলের পরবাসি দাদারা (ধান কাটা শ্রমিক) দলবেঁধে এসে ধান কেটে মাড়াই ও ঝেড়ে শুকনা করে গোলায় ভরে দিয়ে যেত। কিন্তু এবার করোনার কারণে তারা কিছুতেই আসতে রাজি হচ্ছেন না। তাই মাঠের পাকা বোরো ধান নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন। অন্যদিকে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির দাপটে ক্ষেতের ধান ঝরে ও পানিতে পড়ে তারা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তবুও কাঙ্খিত ধান কাটা শ্রমিক মিলছে না।

তারা আরও জানান, এখানে বর্তমানে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৪০ টাকা দরে। অথচ একজন ধান কাটায় শ্রমিকের মুজুরি দিতে হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা। সাথে দুই বেলার খাবার। কাজ করে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত। তাতে কৃষকের চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই মাঠ ভরা পাকা ধানই এখন তাদের ঘাড়ের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একই অভিযোগ খড়মখালি গ্রামের ধান চাষি পরিমল মজুমদার, কংকন মজুমদার, মনিমহোন হীরা, অসীম বিশ্বাস, কৃষ্ণ রানাসহ অনেকের। তাদের ভাষ্য, এবার ধান চাষ করতে আমাদের একর প্রতি খরচ আছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। খুব ভালো ফলন হলে প্রতি একর জমিতে ৭৫ থেকে ৮০ মন ধান উৎপাদন হয়। হাজার টাকার কমে ধানের মন বিক্রি করলে চালান উঠবেনা।
কৃষি বিভাগ বলছে, বাগেরহাটে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনার প্রভাবে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উপর নির্ভর করতে হবে। ইতিমধ্যে ভর্তুকি মূল্যে কিছু রিপার (ধান কাটার যন্ত্র) বিতরণ করা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে মতে, বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় এবছর ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৫০ হেক্টর, ফকিরহাটে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর, মোল্লাহাটে ৮ হাজার ৩২০ হেক্টর, রামপালে ৪ হাজার ৭৫ হেক্টর, কচুয়ায় ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর, মোরেলগঞ্জে ৫ হাজার২০ হেক্টর, চিতলমারী ১১ হাজার ৪৭০ হেক্টর, শরণখোলা ৮৫ হেক্টর, মোংলায় ৫ হেক্টর জমিতে ফসক। এর মধ্যে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রীড) এবং বাকী জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এবছর ২ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিকটন বোরোর আবাদ হবে বলে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বোরোর এই বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটলেও দেখা দিচ্ছে শ্রমিক সংকট। আকাশে একটু মেঘ দেখলেই চাষীদের চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। কিভাবে তারা সোনার ফসল ঘরে তুলবে।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকতা ঋতুরাজ সরকার মুঠোফোনে বলেন, এবার অনেক চাষিই করোনার ভয়ে বাইরের ধানকাটা শ্রমিক আনতে রাজি না। আবার অনেক শ্রমিক আবার আসতে রাজি না। যার কারণে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই এই সমস্যা দুর হবে।

পিবিএ/শেখ সাইফুল ইসলাম কবির/ এমএ

আরও পড়ুন...