টাঙ্গাইলে নিয়মিত দেখা মেলে না ডাক্তারদের

doctor-PBA

পিবিএ,ঢাকা: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীন তরফপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্মরত সহকারী সার্জন ডা. রেজুয়ানা ইসলাম প্রায় তিন বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি কোথায় আছেন, তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেউ বলতে পারছেন না। তবুও তার সরকারি চাকরিটি বহাল তবিয়তে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সরকারি ডাক্তাররা নিয়মিত কর্মস্থলে আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানান, ডা. রেজুয়ানা ইসলাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগের পরি: (স্বা:)/ঢাকা/পা/বদলী/১৩/১৫৭১ তাং১২/০৮/২০১৩ স্মারকে (কোড নং ১২৬৪৩৬) মেডিকেল অফিসার হিসেবে বদলী হয়ে ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে তরফপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করেন। কিন্তু ডা. রেজুয়ানা ইসলাম গত ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হতে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার অনুপস্থিতির বিষয়টি ৭ মাস পর একই বছর ২০ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ টাঙ্গাইল সিভিল সার্জনকে অবহিত করেন।

এ ব্যাপাবে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ডা. রেজুয়ানা ইসলামের অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

একই ব্যাপারে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. নিতিশ কান্তি দেবনাথের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী শৃঙ্খলা শাখা থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন অনুপস্থিতির বিষয়টি লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে থাকলে অব্যশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এই ডাক্তারের অনুপস্থিতির কারণে ওই ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার জনসাধারণ সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরেজমিন দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে অবস্থান করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ পাঁচজন ডাক্তারকে পাওয়া যায়। এ ছাড়া ডাক্তারদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে বেসরকারি মেডিকেল এসিস্ট্যান্ড ট্রেনিং স্কুল থেকে আসা ইন্টার্ন শিক্ষার্থীদের বসে মুঠোফোনে ফেসবুক চালাতে দেখা গেছে। কয়েকটি কক্ষ খোলা থাকলেও কর্মরত ডাক্তার পাওয়া যায়নি। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জরুরী বিভাগ ও আবাসিক ভবনে কোন চিকিৎসক থাকেন না বলে জানা গেছে। মির্জাপুর উপজেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী দেলদুয়ার ও বাসাইল উপজেলার রোগীরা হাসপাতালে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ কেউ হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

হাসপাতালে ১৮ জন ডাক্তারের মধ্যে ৫ জন প্রেষনে। অন্য ১৩ জনের মধ্যে ৪জন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং ৯ জন হাসপাতালে কর্মরত থাকলেও তারা নিয়মিত কর্মস্থলে আসেন না বলে জানা গেছে। ডাক্তাররা রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করে মাঝে মধ্যে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকের বিরুদ্ধে সপ্তাহে এক দিন কর্মস্থলে আসারও অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর ভিড় থাকলেও ডাক্তারদের দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে তারা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ধেরুয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. মো. ফরিদুল ইসলাম, মহেড়া ইউনিয়নে ছাওয়ালী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. জিনাত রহমান, ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. শামীমা হোসেন, আনাইতারা ইউনিয়নে আনাইতারা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. ফারহানা রহমান ও ভাওড়া ইউনিয়নে গলচড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. মোহাম্মদ আবজালুর বাশারকে বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে পাওয়া যাননি।

এছাড়া ছাওয়ালী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত ডা. জিনাত রহমান, আজাগানা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত সহকারি সার্জন ডা. মুহাম্মদ মোখলেছুর রহমান ও ডা. মো. রাহাত চৌধুরী টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাঁশতৈল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত ডা. মো. নাহিদ নুর তুষার সাভারের বাংলাদেশ কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতাল এবং ডা. রোকনুজ্জামান ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ফতেপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত ডা. শামীমা হোসেনের মুঠোফোনে সাংবাদিক পরিচয়ে কর্মস্থলে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

আনাইতারা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. ফারহানা রহমানের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আজ অফিসে যাননি।

ধেরুয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত ডা. মো. ফরিদুল ইসলামের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, উপজেলা সদরের বাসায় আছেন।

গলচড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. মোহাম্মদ আবজালুর বাশারের সঙ্গে কথা হলে তিনিও অফিসে না যাওয়ার বিষয়টি জানান।

এ বাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ডা. রেজুয়ানা ইসলামের অনুপস্থিতির বিষয়টি ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর মাসে সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে। ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করণে প্রত্যেককে জরুরী বিভাগে ডিউটি বন্টন করা হয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে রোগীদের সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করণে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গত ২৮ জানুয়ারি সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্থানীয় এমপি মো. একাব্বর হোসেন আকস্মিক হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ (টিএইচএফপিও) ১৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৪ জন অনুপস্থিত দেখতে পান। এছাড়া হাসপাতালের নানা বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যা পরিদর্শন বইয়ে উল্লেখ করেছেন।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...