আহসান টিটু, বাগেরহাট : ২০১৬ সালে শুরু হওয়া ৬৯৬ কোটি টাকায় তৈরি বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাত্র ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলা অংশে দ্বিতীয় দফায় বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত দুই দিনে উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীর পাড়ের গাবতলা-বগী গ্রাম সংলগ্ন বাঁধের ১০০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উপজেলার বগী ও গাবতলা গ্রামের মানুষ বলেশ্বর নদী ভাঙ্গনের আতঙ্কে থাকে। এবছরেও ৯ মে, শনিবার রাতে আকস্মিক ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। লোকালয়ে যাতে পানি না ঢুকতে পারে সেজন্য ভোর থেকেই রিং বেড়িবাঁধের (গ্রাম রক্ষা বাধ) কাজ শুরু করা হয়।
কিন্তু নদী শাসন না করে স্বল্প পরিসরের এই কাজে খুশি নয় এলাকাবাসী। নদী শাসন টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছন স্থানীয়রা। তা না হলে বগী ও গাবতলা গ্রামের বেশিরভাগ অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা খান শফি উদ্দীন বলেন, “ফি বছর বগি ও গাবতলা এলাকায় পুরান ওয়াপদা বাঁধ ভাইঙ্গা নদীর মধ্যে চইলা যায়। ছোট কালে যে হানে নদী দেখছি তারপর প্রায় ২ মাইল ভাইঙ্গা গ্যাছে। তিনারা (পাউবো) বার বার বেড়িবাঁধ বানায় কিন্তু নদী ভাঙ্গন বন্ধের ব্যবস্থা করে না, রাস্তা বানাইলেই তো ট্যাকা!”
আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম লাখু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নদী খেয়ে ফেলেছে আমাদের বাপ দাদার ভিটে মাটি। প্রতিবছরের মত এবারও শুরু হয়েছে ভাঙন।”
শুক্রবার ও শনিবার রাতে ভাঙনে প্রায় এক শ মিটার বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সাথে কয়েক একর জমিও চলে গেছে নদীতে। আওয়ার শরণখোলা নিউজ পোর্টালের এডিটর মো. শাহীন হাওলাদার বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে এ এলাকার বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিআইপি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধায়নে রিং বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। নদী শাসন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। যাতে লোকালয়ে পানি ঢুকতে না পারে সে জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যেই রিং বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হবে। জমি অধিগ্রহণ ও নদী শাসন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করে ওই স্থানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন তিনি।
বলেশ্বর নদীর মত একটি খরস্রোতা বৃহৎ ভাঙ্গন প্রবন নদী তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের নকশায় কেন নদী শাসনের বিষয়টি রাখা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের বিষয়টি রাখলেও বিশ্বব্যাংক তা আমলে নেয় নি।
২০০৭ সালে প্রলঙ্কারী ঘূর্নিঝড় সিডরে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার মানুষের সব থেকে জানমালের ক্ষতি হয়। তারপরে ঝড় ও জলচ্ছাস থেকে বাঁচতে এই দুই উপজেলাবাসীর একটাই দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার গত ২০১৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়।
জমি অধিগ্রহণের পর ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বেড়িবাঁধ ও স্লুইচগেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৬২টি কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় ৬০ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নদী শাসন করে কাজ না করার কারণে শরণখোলা উপজেলার বগী ও গাবতলা গ্রামের পাশের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে নির্মানাধীণ বেড়িবাঁধে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
আজ ১০ মে, রবিবার বেলা ৩টায় বাগেরহাট -৪ আসনের এমপি আমিরুল আলম মিলন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নদী শাসনের বিষয়টি দেখবেন বলে এলাকাবাসীকে আস্বস্ত করেন।
পিবিএ/আহসান টিটু/এমএ