এস,এম,হাবিবুল হাসান: সুন্দরবনে চলতি মৌসুমে মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। মৌয়ালদের মতে, অদক্ষ মৌয়ালদের পাস পারমিট দেওয়া, পাস পারমিট দেওয়ার আগেই মাছ ও কাকড়া ধরার পাস নিয়ে চুরি করে মধু সংগ্রহ করা, প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে চলতি মৌসুমে প্রত্যাশিত মধু সংগ্রহ করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন মৌয়ালরা ।
মধু সংরক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা বেডস ও মৌয়াল শ্রমজীবী সমবায় সমিতির অফিস সহকারী আশীষ কুমার মন্ডল জানান, ২০১৯ সালে এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত আমরা ১৩ জন মৌয়ালদের কাছ থেকে ৬০২ কেজি মধু সংগ্রহ করি। কিন্তু ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ১৩ জন মৌয়ালীর কাজ থেকে মাত্র ২৭৫ কেজি মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে গত বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি।
রবিউল ইসলাম নামে এক মধু ব্যবসায়ী বলেন, দাদন দিয়ে মৌয়ালদের মধু কাটার জন্য সুন্দরবনের পাঠিয়েছি। মধুর পরিমাণ কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছি। গত বছরের তুলনায় এবছর মধুর পরিমাণ খুবই কম।
তিনি আরও জানান, যে সময় থেকে মধুর পাস দেয়া হয়, তার আগে থেকেই মধুর চাক কেটে নেয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা মধু কাটার সময় কাটা চাক পাচ্ছি।
মৌয়াল জাহাঙ্গীর আলম জানান, বুলবুল ঝড়ের কারণে বনের গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে। সে কারণে মাছিরা চাক বসানোর জায়গা খুঁজে না পাওয়ায় মধু কম পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আগে থেকেই কেটে নেয়া হয়েছে মধুর চাক।
সুন্দরবনে মধু কম হওয়ার বিষয় নিয়ে স্থানীয় সুন্দরবন গবেষক পীযূষ বাউলিয়া পিন্টুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রকৃতির প্রভাবে ও বুলবুল ঝড়ের কারণে সুন্দরবনের গাছপালা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারছে না। এ কারণে মধু কম হচ্ছে। তবে অসাধু জেলেরা, যাদের মৌচাক কাটার মত অভিজ্ঞতা নেই, তারা আগে থেকেই মৌচাক কাটায় পরবর্তীতে মৌয়ালরা সেখানে যেয়ে সেই মৌচাক থেকে অধিক পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারছে না।
এদিকে, বন বিভাগের দাবি, প্রকৃতির কারণে মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারছে না। এছাড়া সময় মত বৃষ্টি না হওয়ায় মৌমাছিদের বেঁচে থাকা অসম্ভব পড়ছে। এতে মধু কম হচ্ছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া ধরতে না পারায় মধুর পাস নিয়ে মধু সংগ্রহ করছে। এ কারণে মৌয়ালদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র মতে, ২০১৯ সালের মৌয়ালের সংখ্যার চেয়ে ২০২০ সালে মৌয়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে মধু কম হওয়ায় স্বাভাবিক। মৌয়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সরকারি রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান জানান, আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত মৌয়ালরা সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহের সুযোগ পাবে। এ বছর ১৫শ কুইন্টাল মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পিবিএ/এস,এম,হাবিবুল হাসান/এএম