নওগাঁয় মেস মওকুফের দাবি শিক্ষার্থীদের

পিবিএ,নওগাঁ : নওগাঁয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা বাসা (মেস) ভাড়া নিয়ে বসবাস করে থাকেন। বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে আছে নওগাঁ শহরের মেসগুলো। ফলে শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে নিজ বাসায়। নওগাঁ শহরের প্রায় ২০০ থেকে ৩০০টি মেস রয়েছে যা বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি তারা বাড়িতে অবস্থান কালে মেসের মালিক পক্ষ ফোন করে প্রতি মাসের ভাড়া পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে।

নওগাঁ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেসে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক গত ২০ মার্চ থেকে শহরের সকল ছাত্রনিবাস ও ছাত্রীনিবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই তারা মেস ছেড়ে দিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ইতি মধ্যে মার্চ মাসের ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু মেসের মালিকরা বার বার ফোন দিয়ে প্রতি মাসের ভাড়া পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। ভাড়া পরিশোধ করতে না পারলে মেসে ছেড়ে দিতে বলা হচ্ছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বেশি ভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কেউ নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাসাবাড়িতে টিউশন করে মেস ভাড়াসহ যাবতীয় পড়ালেখার খরচ যোগায়। আবার কেউ বা সেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র সম্বল বাবার কাছ থেকেই খরচ নেয় । আজ দীর্ঘদিন যাবত আমাদের টিউশন নেই। সবাই বাড়িতে অবস্থান করছেন। এমন অবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষের মত আমাদের শিক্ষার্থী সমাজও আজ সংকটাপন্ন অবস্থায়। তাই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মেস ভাড়া মওকুফের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে কয়েক জন মেস মালিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, অনেক মেস মালিক রয়েছেন যারা বাসা বানিয়ে মেস করেছেন তাদের অধিকাংশ মেস মালিক ব্যাংক থেকে লোন করে বাড়ি করেছেন। প্রতি মাসে তারা যে ভাড়া পান তা থেকে একটা অংশ তাদের প্রতিমাসে ব্যাংকে দিতে হয়। এই মহামারীর কারণে মেস ভাড়ার টাকায় যে সকল মেস মালিকদের সারা মাস সংসার চালাতে হয়। তাই তাদের সরকারি প্রণোদনার আওতাভুক্ত করার দাবি জানান। তারা জানান, এর মধ্যে অল্পসংখ্যাক মেস মালিক তাদের মেসে ভাড়া মৌকুফ করেছেন। এছাড়া তারা যারা একেবারে অসহায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তা মৌকুফ করছেন। তারা বলেন, এই বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে যারা সচ্ছল অবস্থায় রয়েছেন অথচ পড়াশুনার তাগিদে বিভিন্ন মেসে থাকেন সেসকল পরিবারগুলো যেন তাদের পাশে থাকেন সেই দাবি জানিয়েছেন তারা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জানান, বৈশ্বিক মহামারীর কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেস ভাড়া দিতে পারছে না। জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তারা শহরের মেস মালিকদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করছেন। মেস মালিকরা ভাড়া মৌকুফের জন্য তাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তাছাড়া কোনও মেস মালিক কোনও শিক্ষার্থীদের আসবাবপত্র জব্দ করে ভাড়া আদায় বা কোনও প্রকারের চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীর কাছে থেকে ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করতে পারবে না বলে মেস মালিকদের পক্ষ থেকে জানানও হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ জানান, কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসনকে জানান কতিপয় মেস মালিক শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। এ মাসের শুরুতে মেস মালিক এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ছাত্রছাত্রী, মেস মালিক পক্ষ এবং জেলা প্রশাসন একমত হয়ে সিদ্ধান্তে আসেন যে সকল ছাত্রছাত্রী যাদের আর্থিক সংগতি আছে যারা ভাড়া পরিশোধ করবার ক্ষমতা রাখেন তারাই শুধু ভাড়া পরিশোধ করবেন। আর যে সকল ছাত্রছাত্রী ভাড়া দিতে পারবেন না তাদের ভাড়ার জন্য কোনও প্রকার চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের কাছে দু’জন প্রশাসনের কর্মকর্তা মুঠোফোন নাম্বার দেওয়া আছে। যদি কোনও মালিক ভাড়া পরিশোধের জন্য ছাত্রছাত্রীদের চাপ প্রয়োগ করে তাদের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অবহিত করলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

এই বৈশ্বিক সময়ে ছাত্রছাত্রীদের মেস ভাড়া যদি মৌকুফ করে দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে আরও সচেষ্ট হবে। অপরদিকে বাড়িওয়ালাদের দাবি ব্যাংক লোনের সুদ সরকার ইতিমধ্যে মৌকুফ করে তাদের এই সমস্যা মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের মেসে ভাড়া মৌকুফ করে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার আহ্বান জানান সচেতন মহল।
পিবিএ/সুমন আলী/এএম

আরও পড়ুন...