মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ নতুন করে ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে জেলায় মোট ৩৩১ জনে করোনা শনাক্ত হলো। নতুন ২৭ জনের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭ জন, সিরাজদিখান উপজেলায় ৪ জন, টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় ১২ জন এবং গজারিয়া উপজেলায় ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ তথ্য নিশ্চিত করে জানান- গত ১১ ও ১২ মে তারিখের ১২৪ জনের নমুনার রিপোর্ট পাঠিয়েছে নিপসম। এর মধ্যে ২৭ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। বৃহস্পতিবার আরও ১৩৭টি নমুনা নিপসমে প্রেরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৪ জন।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় নতুন ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান মো. নাসমুস সোয়েব (৪০), মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের নারী চিকিৎসক (৩১), শহরের উত্তর ইসলামপুরের মা (৪০) এবং কন্যা (২০), কাটাখালী গ্রামের পুরুষ (৪৫), শহরের সরকারি কোয়াটারের গৃহকর্মী (৫৫) এবং মালিপাথর গ্রামের পুরুষ (৬০)।
মুন্সীগঞ্জের সবচেয়ে বড় সঙ্কটে পরেছে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় ১২ জনের করোনা পজেটিভ আসে। এরা সকলেই স্বাস্থ্য বিভাগের। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাসলিমা ইসলাম (৪৮), আরএমও ডা. নুর ই আলম সিদ্দিকী (৩৮), মেডিক্যাল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম (৩৬) ও মেডিক্যাল অফিসার ডা. নুরে আলম শুভ (২৮)। এছাড়াও দুইজন সেকমো পুরুষ (২৭) ও পুরুষ (৩০), ক্যশিয়ার (৪৪), ওয়ার্ড বয় (৪৪) পুরুষ গাড়ি চালক (২৩), পুরুষ এমএলএস (৫০) ও পুরুষ ক্লিনার (৩৩) এবং আরও এক পুরুষ কর্মী (৩৫)। এর আগে এক চিকিৎসক এবং নার্সসহ আরও চার জনের করোনা শনাক্ত হয়। এই নিয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সটির পাঁচ চিকিৎসকসহ ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হলো।
সিরাজদিখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরও জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরা হলেন- নার্স মহিলা (৩০) ও মহিলা (৩০)। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মহিলা (৬০)ও মহিলা (৩১) রযেছে।
অপরদিকে গজারিয়ায় উপজেলার দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও মৎস্য কর্মকর্তাসহ ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদর মধ্যে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আসলাম (৩১), ইমামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মন্সুর আহম্মেদ জিন্নাহ (৪৮), বালুয়াকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান শহীদুজ্জানান জুয়েল (৪৫) ও গজারিয়া ইউএনও অফিসের কর্মচারী (৫৪)।
সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ আরো জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এখন নিজ বাসায় আইসোলেশেনে থেকেই অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এখানে অন্যান্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন যাদের করোনা শনাক্ত হয়েছে সকলেই আইসোলেশনে আছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সিমিত আকারের চালু রাখার চেষ্টা চলছে।
জেলায় মোট শনাক্ত ৩৩১ জনের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায়ই ১৩৭ জন, এরপরে সিরাজদিখান উপজেলায় ৫৪ জন। এছাড়া শ্রীনগর উপজেলায় ৪১ জন, লৌহজং উপজেলায় ৩৭ জন, গজারিয়া উপজেলায় ৩৪ জন এবং টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের ৭০ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বেশী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ব্যাপক হারে স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়াটা উদ্বেগজনক। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নিজেদের সুরক্ষায় তারা কতটুকু সর্তক ও দায়িত্বশীল ছিলেন এবং সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। জেলার ৬ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে শুধু সদরে ২ জন আইসোলেসনে আছেন।
স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে থেকে তারা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে আগামীতে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে মুন্সীগঞ্জের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিবিএ/আল মামুন/বিএইচ