ইউসুফ আলী সুমন,মহাদেবপুর: নওগাঁর মহাদেবপুরে বালুর পরিবর্তে মাটি দিয়ে এলজিইডি’র সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তদন্তে গিয়ে বালুর সাথে মাটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাননি তদন্ত দল। তদন্ত দলে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ জানান, সাংবাদিকেরা ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে। ইচ্ছে করলে তিনি ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ফাইল পাঠাতে পারতেন বলেও মন্তব্য করেন।
প্রকাশ, নওগাঁর মহাদেবপুর সদর ইউনিয়নের চকগোবিন্দ মাঠ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩ মিটার সড়ক ৭৭ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে পাকা করণের কাজ চলছে। রাস্তায় অর্ধেক বালু ও অর্ধেক খোয়া দিয়ে রোলার করার বদলে নিম্নমানের বালুর সাথে মাটি মিশিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। গত ১৫ মে শুক্রবার বিকেলে কয়েকজন সাংবাদিক সে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেই এলাকায় যান। এলাকার জনপ্রিয় একটি ফেসবুক আইডি থেকে সেখানকার বাস্তব অবস্থার লাইভ ভিডিও দেখানো হয়।
ভিডিওতে দেখা যায় যে, বালুর সাথে মাটি মিশিয়ে খোয়া দিয়ে রোলার করা হয়েছে। রাস্তার দু’পাশে মাটির স্তুপ। বৃষ্টির পানিতে রাস্তার মাটি কাদায় পরিণত হয়েছে। কোন কোন জায়গায় পলি মাটি জমাট বেঁধেছে। রাস্তার কোন কোন জায়গায় দেখা যায় বালুর সাথে বয়লারের কালো ছাঁই। ভিডিওতে দেখানো হয়, ইন্ড এজিংয়ে মাটি খুঁড়ে ইট বসিয়ে সেই মাটি এজিংয়ের দু’পাশে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই মাটি রাস্তার মাঝখানেও বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাস্তায় কাজ করা শ্রমিকরা জানান, এজিংয়ের মাটিগুলো রাস্তায় দেয়া হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকায় কোথাও সাইন বোর্ড দেখা যায়নি। লাইভ ভিডিওতে দেখানো হয় যে, প্রকল্পের তথ্য জানার জন্য মোবাইলফোনে উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তিনি ফোন বন্ধ করে দেন। মোবাইলফোনে এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওমর বক্স জানান, তিনি প্রকল্প এলাকায় যাননি। তদন্ত করে যদি মাটি পাওয়া যায় তবে নতুন করে কাজ করা হবে। তিনি জানান, তিনি নিজে প্রকল্প এলাকায় না থাকলেও কার্য সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সেখানে রয়েছেন। কিন্তু কোথাও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও লাইভ ভিডিও দেখে উপজেলা প্রকৌশলী তা তদন্ত করবেন বলে মন্তব্য লেখেন।
এই ঘটনার দুই দিন পর রবিবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোবারক হোসেন, ল্যাব টেকনিশিয়ান আসাদুল ইসলাম মাখন, উপজেলা প্রকৌশলী প্রমুখ প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। তারা রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খুঁড়ে দেখে কোথাও মাটির কোন অস্তিত্ব পাননি বলে জানান।
বিকেলে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের তার দপ্তরে ডেকে জানান যে, প্রকাশিত সংবাদ ও লাইভ ভিডিওটিতে সঠিক তথ্য প্রচার করা হয়নি। লাইভে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে যে মাটির কথা বলা হয়েছে তা ঠিক নয় বলে তিনি জানান। তিনি জানান, রাস্তর কাজ সিডিউল অনুযায়ী খুব ভালভাবে হচ্ছে বলেও তিনি জানান। প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড কেন নেই সে প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ইন্ড এজিয়ের ভীতরের দিকে বালু থাকবে এবং বাইরের দিকে মাটি থাকবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে, সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় এই রাস্তাটি নির্মাণে নিম্নমানের বালু ও মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। তারা জানান, শুক্রবার লাইভ ভিডিও দেখানোর পর শনিবার রাস্তার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে বালু ফেলা হয়েছে। এমনকি রাস্তার দু’পাশে বালুর স্তুপ করে রাখা হয়। এগুলো সম্পন্ন করার পরই রবিবার তদন্ত করা হয়। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা এবং লাইভ ভিডিও দেখানোর পর কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় এলাকাবাসী সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সরেজমিন তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি নওগাঁর সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কাজের মান ঠিক আছে, ‘যেভাবে বলা হচ্ছিল বালির পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে আসলে তা সঠিক নয়। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খুড়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোথাও মাটি ব্যবহারে তথ্য পাওয়াা যায়নি।
পিবিএ/ইউসুফ আলী সুমন/বিএইচ