আম্ফানে’র তান্ডবে কলাপাড়ায় ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত, ১৭ গ্রাম পানিবন্দী

পিবিএ,পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্নিঝড় আম্ফান’র তান্ডবে অন্তত: তিন শতাধিক ঘরবাড়ী বিধস্ত হয়েছে। এসময় সতর্কতা মূলক প্রচারনা চালাতে গিয়ে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের ৭নং ইউনিটের ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কমিটির ইউনিট টিম লিডার শাহআলম (৫৫) এর মৃত্যু হয়। এছাড়া একই ইউনিয়নের পাঁচজুনিয়া গ্রামে গাছ চাপা পড়ে মাহবুবু (৩৫) নামের একজন আহত হয়েছে। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট বেশী পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ৯ শতাধিক মাছের ঘের ও পুুকুর থেকে কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে বর্ষাকালীন সবজির ক্ষেত সহ বোরো ধানের ক্ষেত। ঘূর্নিঝড় আম্ফান’র তান্ডবে উপজেলার ১২ টি বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে। দু’শতাধিক স্পটে গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁধ ভাঙ্গা জনপদ লালুয়ার ইউনিয়নের ১৭ গ্রাম এখন পানিবন্দী হয়ে আছে। মানুষের বাড়িঘর এখন আর বসবাস করার উপযোগী নেই। আম্ফান’র তান্ডব থামলেও অমাবস্যার প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকালে রাবনাবদ নদীর জোয়ারে লোনা পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় ফসলী ক্ষেত। এমকি রান্না করার চুলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট। এখন ওই গ্রামের অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এছাড়া চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের রাবনাবাদ পাড়ের প্রায় ২০০ মিটার রিং বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বাঁধঘেষা অন্তত ২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। বিলীন হয়ে গেছে শত শত গাছপালা।
দেবপুরের স্থানীয় বাসীন্দা ফরহাদ মৃধা জানান মুহুর্তের মধ্যে বাঁধটি জলোচ্ছ্বাসে বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ধসে যাওয়া শুরু হয়। এর ফলে তার প্রায় চার লাখ টাকার মাছ পুকুর ডুবে ভেসে গেছে। পুকুরটিও রাবনাবাদ গিলে খেয়েছে। পাঁচটি পুকুরের মাছ, দেবপুর গ্রামের অর্ধশত কৃষকের ডাল জাতীয় শস্য লোনা পানির প্লাবনে নষ্ট হয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধু কলোনী এলাকার অধিবাসী মো. আলামিন জানান, তার ঘরে একটি গাছ পড়ে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি মাত্র দু’মাস আগে কষ্ট ক্লেশ করে ঘরটি তুলেছিলেন ।
কলাপাড়া’র চাকামইয়া ইউনিয়নের অধিবাসী দুলাল মুন্সী বলেন, তার পাশাপাশি দু’টি ঘর জুড়ে একটি গাছ পড়ে ঘরটি ভেঙ্গে যায় । তিনিসহ তার পরিবারের লোকজন রাত জেগে কাটিয়েছেন। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল অন্তত: ঘন্টায় ১৫০কিলোমিটার ।
বুধবার সন্ধ্যায় জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় বেড়িঁ বাধের বাইরে অন্তত: দু’শতাধিক ঘরবাড়ী পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসময় হাজার মানুষ আশে পাশের সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে । অনেক মানুষ পানি বৃদ্ধির আশংকায় বহুতল ভবন কিংবা স্কুল কলেজে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে । তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, আম্ফান’র তান্ডবে একজন নিহত ও একজন আহতের খবর মিলেছে। এছাড়া ৩৭৮টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৪টি আংশিক এবং ৫৪টি সম্পুর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। এটি প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য। পুর্ণাঙ্গ তথ্য তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, ঘূর্নিঝড় আম্ফান’র জন্য মোট ১৯৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। তবে এলাকায় বাতাসের পাশাপাশি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছপালা, ঘরবাড়ী সহ হাঁস-মুরগি গবাদি পশু ও মাছের ঘের’র ক্ষতি হয়েছে ।

পিবিএ/উত্তম কুমার হাওলাদার /এমআর

আরও পড়ুন...