অনিয়ম,অব্যবস্থাপনার কারণে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে

রাজস্ব
বেনাপোল বন্দরের রাজস্ব ঘাটতি দিনদিন বেড়েই চলছে।

পিবিএ, শেখ নাছির উদ্দিন,বেনাপোল (যশোর): দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল বন্দরের রাজস্ব ঘাটতি দিনদিন বেড়েই চলছে। ভারতের পেট্রাপোলের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বন্দর-কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কর্মকতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরই মধ্যে নানা রকম প্রতিবন্ধকতায় গেল বছর (২০১৮) মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে সপ্তাহে সাতদিনে ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা। এতে সরকারের যেমন রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়েছে, তেমনি লোকসান গুণছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে গতিশীলতা বাড়াতে এখানকার বাণিজ্যে জড়িত প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরস্পরের সমন্বয়, বৈধ সুবিধা দেওয়া ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে তারা সমন্বয় করে কাজ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা যায়, দেশে ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১৩ বন্দরের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর। ১৯৭২ সাল থেকে এ পথে ভারতের সঙ্গে বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্যিক যাত্রা। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজের কারণে প্রথম থেকে এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি ব্যবসায়ীদের। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বন্দরে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশাসনিক বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা আর ব্যবসায়িক হয়রানির কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কাঙ্খিত রাজস্ব আসছে না। গেল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এসময় ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চলতি ২০১৮- ১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ৬ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে আদায় হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ঘাটিত রয়েছে ৬০৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত বছর (২০১৮) বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল ১৫২ দিন। শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের আন্দোলন আর বন্দরে অগ্নিকা-ের ঘটনায় বাণিজ্য বন্ধ ছিল ২৬ দিন এবং সরকারি ছুটিতে বন্ধ ছিল ১২৬ দিন। এতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় সরকারের ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের লোকশান হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের অনিয়মের কারণে বার বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এখনও সাধারণ পণ্যের ঘোষণা দিয়ে কেমিক্যাল পণ্য খালাস করা হচ্ছে। এতে বার বার ঘটছে অগ্নিকান্ড

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সব বন্দরে আমদানি পণ্যের উপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যে পণ্যের উপর রাজস্ব ৪ ডলার বেনাপোল বন্দরে ওই একই পণ্যের উপর সাড়ে ৪ ডলার শুল্ক আদায় করা হচ্ছে।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, অবকাঠামোগত সমস্যায় এ পথে (বিবিআইএন) চার দেশের মধ্যে বাণিজ্যের উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয়নি। এছাড়া বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্যের মান পরীক্ষা নিয়ে কিছু জটিলতা আছে যা অন্য বন্দরে নাই।

আমদানিকারক ইদ্রিস আলী বলেন, আমদানি পণ্য কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুনিদিষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকলেও আবার বিজিবি সদস্যরা তা আটক করেছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার জাকির হোসেন জানান, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ার কিছু কারণ আমরা ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছি। আগামীতে সেসব বিষয়ের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য থাকবে।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস জানান, আগে অবশ্য কিছুটা অব্যবস্থাপনা ছিল। তিনি যোগদানের পর বন্দরে অবৈধ প্রবেশ নিষেধ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন। বাণিজ্যে গতিশীলতা ফেরাতে ইতিমধ্যে স্বল্প পরিসরে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু হয়েছে। সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আরো কিছু জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

 

পিবিএ/এনএস/জেডআই

আরও পড়ুন...