পিবিএ,ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৬ নং গান্না ইউনিয়নের কাশিম নগর গ্রামের প্রায় শত ভাগই আম চাষি।ঐ গ্রামে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার বিঘা জমিতে আম চাষ করে দেশের ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল,চট্রগ্রাম,মাদারিপুর,খুলনা,যশোরসহ বিভিন্ন জেলাতে আম রপ্তানি করে চাষিরা প্রতি বছর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা আয় করেন।
এবারও দেশের মাটিতে আম রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জেলার সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের কাশিম নগর গ্রামের চাষিরা । কিন্তু বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে চাষিদের ৩ হাজার বিঘা জমিতে করা আমরুপালি সহ বিভিন্ন জাতের আমের বাগান। গাছে আর কোনো আম নেই। সব ঝরে গেছে। পুরো গ্রামের চিত্র একই। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় ঝরে পড়া আম গাছের নিচে মাটিতেই পড়ে আছে।চাষিরা বলছেন এই আম কেনার মত কেউ নেই।গাছের নিচে থেকে আম পরিস্কার করতেও এখন অনেক টাকার জন খরচ লাগবে।
আম্ফান সব কিছু তছনছ করে দেওয়ার পরের দিন বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাজারে ঝরে পড়া আম বিক্রি হয়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা করে। কৃষকের চোখেমুখে অন্ধকার। ঋণ নিয়ে আমের ব্যবসার ওপর তাঁদের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। পুরো কাশিম নগর বাগানের নিচে মণকে মণ বিভিন্ন জাতের আম পড়ে আছে। কেনার মানুষ নেই। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক বলছিলেন, কাশিম নগরে বাগানের পর বাগান গাছের নিচে আম পড়ে আছে। আর মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিন সময় পেলে আমগুলো পূর্ণতা পেত।
প্রায় তিন মাস ধরে করোনাভাইরাস কৃষকের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে, নতুন করে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এসে কৃষকের পুরো কোমর ভেঙে দিয়েছে। আম্ফান যে ক্ষতি করে দিয়ে গেল, তা কাটিয়ে উঠতে কত দিন লাগবে, তা কেউ বলতে পারছে না। এদিকে সারা দেশে আমের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মিডিয়াতে তার একটি ধারণা দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, সারা দেশে ১৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ আমের ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রিপন হোসেন বলেন, আমার ওয়ার্ডের প্রায় শত ভাগ চাষি আম চাষের উপর নির্ভর করে জিবিকা নির্বাহ করে।বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়ে তারা এই আম চাষ করে থাকে।ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে এবার আম চাষিদের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে চাষিদের সোজা হয়ে দাঁড়াতে কয়েক বছর কেটে যেতে পারে ।তিনি আরও বলেন, কাশিম নগর গ্রামে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার বিঘা জমিতে চাষিরা আম চাষ করে থাকেন।তাতে প্রতি বছরে প্রাই ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা চাষিরা আয় করেন।তিনি চাষিদের পক্ষে সরকারের কাছে এই ক্ষতির ভর্তুকি দাবি করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মুফাখ্খারুল ইসলাম বলেন, আমরা উপ-কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে প্রতি ইউনিয়নে ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে একটি তালিকা করে জেলা কৃষি অফিসে পাঠিয়েছি।জেলা অফিস থেকে তারা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে এরপর ওখান থেকে যে নির্দেশনা আসে সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিতে পারবো ।
পিবিএ/কামরুজ্জামান লিটন/এএম