সাতক্ষীরায় কাবিখার ৬০ টন গম উদ্ধার করেছে পুলিশ : দুদকের মামলা : আটক-৩


পিবিএ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সরকারি ৬০ টন (৮১৭ বস্তা) কাবিখা প্রকল্পের গম উদ্ধার করেছে পুলিশ। গম কেনা বেচার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউপি সদস্যসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এব্যাপারে নাম উল্লেখ করে দুদকের মামলা হয়েছে।

বুধবার(২৭ মে) রাতে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলার মনি-মুক্তা নামক চালের মিল থেকে এ গম উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউপি সদস্য পরানপুর গ্রামের উপেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ছেলে পবিত্র মণ্ডল, কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্বনলতা শানপুকুর গ্রামের আব্দুল গফফারের ছেলে মনিরউজ্জামান ও দেবহাটা উপজেলার আস্কারপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মোজাহিদুল আলম মুকুল।

কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক এস এম আজিজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সরকারি কাজে বরাদ্দকৃত গম নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিক্রির পর তা উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন পূর্ব নলতার আব্দুল গফফারের ভাড়া নেওয়া মনি-মুক্তা এন্টারপ্রাইজে মজুদ করা হচ্ছে বুধবার(২৭ মে) বিকেলে খবর পান। এর ভিত্তিতে আমার নেতৃত্বে পুলিশ সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওই রাইসমিলে অভিযান চালায়। এ সময় গুদাম থেকে ৮১৭ বস্তা গম উদ্ধার করা হয়। যার মোট ওজন ৪০ টন ৮৫০ কেজি।

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, শ্যামনগরের কৈখালি ইউপি সদস্য পবিত্র কুমার মণ্ডল কাবিখা প্রকল্পের কাজ ২৩ টন চাল বিক্রি করে সুমি এন্টারপ্রাইজের মালিক মোজাফফর রহমানের কাছে বিক্রি করে। মোজাফফর গম গুলো কালিগঞ্জের পূর্ব নলতার মনি-মুক্তা এন্টারপ্রাইজের মালিক ভাড়াসিমলার সুলতানপুরের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন ভাড়া নেওয়া রাইস মিল থেকে উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়াও সেখানে থাকা বাকী গমের মালিক কারা তাদেরকে সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

একইসাথে খুলনা দূর্ণীতি দমন সমন্বিত কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তদন্তে নেমেছেন।

তবে কালিগঞ্জের সুলতানপুরের ভাড়া রাইস মিলের মালিক আব্দুল গফফারকে আটক করতে না পারায় তার ছেলে মনিরুজ্জামান, মিলের ব্যবস্থাপক মোজাহিদুল আলম মুকুল ও শ্যামনগরের কৈখালি ইউপি সদস্য পবিত্র মণ্ডলকে আটক করা হয়।

তাদেরকে বৃহষ্পতিবার(২৮ মে) ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, শ্যামনগরের একজন বড়মাপের জনপ্রতিনিধির ভাই এর সঙ্গে জনৈক মোহাম্মদ আলীর সুসম্পর্ক রয়েছে। মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে ওই ৬০ টন গম কালিগঞ্জের পূর্ব নলতার শানপুকুর এলাকার ভাড়াটিয়া মিল মালিক আব্দুল গফফারের কাছে বিক্রি করা হয়। গফফার ধরা পড়লেই আসল সত্য বেরিয়ে পড়বে। ওই গম কাবিখা প্রকল্পের গম বলেও দাবি তাদের।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করা হয় এসব গম। কাবিখা প্রকল্পের এ গম কাজ না করেই গম উত্তোলন করে বিক্রির জন্য গোডাউনে মজুত করে রাখা হয়। পরবর্তীতে শ্যামনগরের সুমি এন্টারপ্রাইজের মালিক মোজাফফরের কাছে বিক্রয় করে।

মোজাফফর কালিগঞ্জ উপজেলার আলোচিত ব্যাবসায়ী মুক্তা-মনি এন্টার প্রাইজের মালিক আব্দুল গফ্ফারের কাছে বিক্রয় করেন।গম গুলো ট্রাকে নিয়ে তার গফফারের গোডাউনে নামানোর সময় পুলিশ হাতেনাতে আটক করে।

শ্যামনগরের সুমি এন্টারপ্রাইজের মালিক মোজাফফর রহমান বলেন, কাবিখার গম ক্রয় করা আইন অবৈধ। কিন্তু এসব ক্রয়-বিক্রয় হয়। সেকারণে আমি শ্যামনগরের কিছু মেম্বরদের কাছ ক্রয় করে মুক্তামনি এন্টারপ্রাইজের মালিক গফফারের কাছে বিক্রয় করেছি।
তবে মুক্তামনি এন্টারপ্রাইজের মালিক গফফারের কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো.মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) জানান, পুলিশ গোপনে জানতে পারে বিপুল পরিমান গম কালিগঞ্জ উপজেলার একটি গোডাউনে নামানো হচ্ছে। গমের চালানটি এসেছে শ্যামনগর থেকে। বিক্রিকৃত গম নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশের একটি টিম আব্দুল গফ্ফারের চালের মিলে অভিযান চালান। আটক করা হয় ৬০ টনের মত গম।

জেলা খাদ্য কর্মকর্তার জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাবিখার গম এটা। অনেক সময় শ্রমিকরা গম নিতে চান না। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান মেম্বর বিক্রয় করে থাকেন। এমনটি হলেও হতে পারে। বিস্তারিত না জেনে মন্তব্য করা যাবে না।

খুলনা দূর্ণীতি দমন সমন্বিত কার্যালয়ের পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, এ ঘটনায় দুদকের উপ-পরিচালক নীল কোমল পাল বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে বৃহষ্পতিবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

পিবিএ/এস,এম,হাবিবুল হাসান/এমএ

আরও পড়ুন...