শতাব্দী আলম : আজ ১৪ দিন পূর্ণ হলো। করোনা রোগির সাথে থেকেও আমি আল্লাহর রহমতে সুস্থ্য আছি। এজন্য খুব সহজ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়েছে।
আমি একজন করোনা রোগির সাথে ৪ রাত ছিলাম। এর মাঝে একরাত ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে থাকতে হয়েছে। যেখানে অর্ধশত করোনা রোগি ভর্তি ছিলো।
১৫ মে আমার ঘনিষ্ট আপনজন করোনা উপসর্গের কথা জানায়। আমাকে কাছে থাকার অনুরোধ করে। ছোট বেলা থেকেই আমরা সুখে দুখে একসাথে ছিলাম। করোনা কেন স্বয়ং মৃত্যুদুত সামনে দাড়ানো থাকলে আমাকে ওর থেকে দুরে রাখতে পারবে না। ছুটে গেলাম।
গিয়ে দেখি তার শরীরে করোনা উপসর্গের চুড়ান্ত লক্ষণগুলো দেখা দিয়েছে। প্রচন্ড কাশি, জ¦র, পাতলা পায়খানা, শরীর ব্যথা এবং ক্ষুধামন্দা। এর দুইদিন পর শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। মুঠোফোনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকের সাথে কথা বলি। সবকিছু শুনে তিনি জিম্যাক্স ও জিংক-২০ ঔষধ খাবার পরামর্শ দেন।
তিনি(রোগি) প্রতিদিন প্রাকৃতিক চিকিৎসা নিয়মিত নিচ্ছিলেন। বিশেষ করে ৫/৬ বার গরম পানিতে গলগলা করেছে। একইভাবে আদা, তেজপাতা, লং, দারুচিনি, এলাচ পানিতে ফুটিয়ে ফু দিয়ে দিনে ৫/৬ বার খেয়েছেন। এগুলো আরো বাড়িয়ে দেয়া হলো।
কথাবার্তা ও মানসিকভাবে চাঙা থাকতে মুঠোফোনে নিয়মিত কথা চলছিল।
এর মাঝে ১৭ তারিখ শ্বাসসকষ্ট বেড়ে যায়। স্কয়ার হাসপাতালে গিয়েও আইসোলেশন বেড খালি না থাকায় ভর্তি করতে পারলাম না। ইউনাইটেড সহ অনেক হাসপাতালে যোগাযোগ করেও কোন গতি করতে পারলাম না। ১৮ তারিখ সাহাবুদ্দিন মেডিকেলে কলেজে কিছুক্ষণের জন্য অক্সিজেন লাগিয়ে রাখি। তারা আধ ঘন্টার মধ্যেই বিদায় করে।
সেখান থেকে রাত সারে দশটায় সোজা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করি। মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ভর্তি করে আমিও পাশের একটা খালি সিটে রাত্রিযাপন করি। তখন করোনা ইউনিটে প্রায় অর্ধশত করোনা রোগি । এদের মধ্যে তিন জন প্রচন্ড চিৎকার করছিলো। অন্যরাও বিভিন্ন উপসর্গের কষ্ট সহ্য করছিল। একদিন পর ২০ মে পত্রিকায় দেখতে পাই ঢাকা মেডিকেলে করোনা উপসর্গে ১২ জনের মৃত্যু।
আল্লাহর রহমতে আমার আত্মীয় সুস্থ্য আছেন। করোনা নেগেটিভ হয়েছে। এখন পুরোপুরি সুস্থ্য।
যা হোক, আমি ১৯ মে ভোরে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রামের বাড়ি ফিরে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকতে শুরু করি। এই সময় চেষ্টা করেছি সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। গ্রামের বাড়িতে একটি আলাদা কক্ষে বসবাস করেছি। প্রাকৃতিক চিকিৎসা কঠোরভাবে মেনে চলেছি। পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের আলাদা থাকলেও তারাও সব নিয়মকানুন মেনে চলছে। আজ ৩ জুন ১৪ দিন পূর্ণ হলো। আমার শরীরে কোনপ্রকার লক্ষণই প্রকাশ পায়নি। অন্য সময় স্বাভাবিক হালকা কাশি হতো। এ’কদিন নিয়মিত গলগলা আর গরম পানি সেবনের কারনে তাও ছিলো না। ইনশাআল্লাহ আমি সম্পূর্ণ ভাল আছি। মহান আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়াহ। তবে প্রাকৃতিক চিকিৎসা যেমন গলগলা, গরম পানি ভাপ, গরম পানি সেবন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া চালিয়েই যাব।
প্রিয় পাঠক, এ কথা হলফ করে বলছি আল্লাহর রহমতে আমি করোনা ভাইরাসকে পরাজিত করেছি। মানসিক শক্তি, প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আমাকে উজ্জিবিত করেছে।
আজ প্রতিদিন যখন করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে তখন বড়ই আফসোস হয়। আমিতো ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে থেকেও সর্তকতা আর সচেতনতার কারনে সুস্থ্য আছি। শুধুমাত্র সচেতনতা আর সর্তকতার অভাবে মানুষের মাঝে সংক্রমণের হার বাড়ছে।
প্রতিটি ঘটনাই কিছু স্মৃতি রেখে যায়। আমার আইসোলেশন কালেও তা হলো। ২ জুন আমার অত্যন্ত প্রিয় ভাই বন্ধু যুগান্তরের প্রখ্যাত সাংবাদিক টঙ্গীর এম এম হেলাল উদ্দিনের মা ইন্তেকাল করেছেন। আমাকে সন্তান বাৎসল্লে আদর করতেন। তাকে শেষ দেখা দেখতে পারলাম না। খালাম্মার জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব হোক আল্লাহর দরবারে এই দুয়ার দরখাস্ত।
আপনারা সর্তক ও সচেতন থাকুন। সুস্থ্য থাকুন। অন্যকে সুস্থ্য রাখুন।
করোনা কাল কেটে গিয়ে আবার স্বাভাবিক সুন্দর দিন আসবে। মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে। এটাই হোক প্রত্যাশা।
পিবিএ/এমএ