জীবন পাল : ছোটবেলা থেকেই আমি লেখাড়ায় ভাল ছিলাম। ৮ম শ্রেণী থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি টুকটাক লেখালেখিতেও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলাম। আর এই টুকটাক লেখালেখির মাধ্যমে সাহস করে একবার স্থানীয় এক পত্রিকায় লেখা দিলাম। সম্ভবত সেই লেখার শিরোনাম ছিল ‘কালক্ষেপন’।
পত্রিকা কর্তৃপক্ষের পরিচিত বাবুল আংকেল লেখাটি প্রকাশ করেছিলেন। লেখাটি প্রকাশ হবার পর আমার সেই টুকটাক লেখার প্রতি আগ্রহটা আরো যেন বেড়ে গেল।
আমার যতদূর মনে পড়ে প্রকাশিত সেই পত্রিকাটি আমি স্কুল নিয়ে গিয়ে আমার প্রিয় শিক্ষক অয়ন স্যারের হাতে দিয়েছিলাম। তবে এর আগেও সম্ভবত পত্রিকায় আমার নিজের লেখা কবিতা ( ছোটবেলার কবিতা যেরকম হয় আরকি) প্রকাশ হয়েছিল। তারপর থেকে নিয়মিত লিখতাম। একটা সময় মাথায় গান লিখার ভুত চেপে বসায় গান লিখার প্রতি মনোযোগ দিলাম। অনেক গানও শুনতাম। রাত জেগে অনেক গান লিখেছি। লেখার সময় মনে মনে একটা সুর আসতো। যদিও সকাল হতে না হতেই সেই সুরটা ভুলে যেতাম। আবার কখনো কখনো অনেক গান লিখতাম অন্য গানের সুরে। সুর করতে পারনাম না। বড় হয়েও অনেক গান লিখেছি। এলাকায় বন্ধুদের মধ্যে এক বন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড ছিল। তাকেও কয়েকটা গান দিয়েছিলাম যাতে সুর করে গানটা মঞ্চে গাই। কিন্তু সেই বন্ধু হঠাৎ লন্ডন চলে যাওয়ায় সেই গানগুলো যেন অবহেলিত হয়ে গেল। তবে আমি স্বপ্ন দেখতাম যে একটা সময় আমার লেখা গান দেশের স্বনামধন্য পরিচিত শিল্পীদের দিয়ে গাওয়াবো। রাতে তখন হয়তো ঘুমের মধ্যে সেগুলো স্বপ্নেও দেখতাম। কলেজে পড়া অবস্থায় বৈশাখ নিয়ে একটা গান লিখে ছিলাম। সেই গানের সুরটা অবশ্য আমি করেছিলাম। কিন্তু প্রকাশ করার স্বপ্নটা আজও পুরন হয়নি। প্রতি বছর বৈশাখ আসার পূর্বে আমি ভাবি ‘ইশ,এইবার যদি স্বনামধন্য কোন শিল্পী আমার গানটি গাইতো’। কিন্তু মনের মধ্যে শান্তনা দিয়ে আফসোসটাকে যেন প্রতি বছরই বিসর্জন দিতে হয়।
মজার ব্যাপার হল, আমি আমার পছন্দের বেশ কয়েকজন শিল্পীর জন্য গান লিখেছি। তার মধ্যে আছেন,এন্ড্র কিশোর, প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চু,বাপ্পা মজুমদার,হাবিব,রিংকু,মিলা,ওয়ারফেইজ প্রমুখ। গানগুলো যখন লিখেছিলাম তখন প্রিয় শিল্পীটির নামটিও লিখে রেখেছিলাম সেই গানের উপরে।
চিত্রনাট্য লিখার ধারনা না থাকলেও তৌকির ভাইয়ের জন্য একটা ছোট্ট গল্প দাড় করিয়েছি। আর সেটার থিম সং লিখেছি। মনে মনে ভেবেছি সেই গানটি টুটুল ভাইকে দিলে গাওয়ালে ভাল হবে।
হাবিব ভাই যখন অ্যালবাম বের করতেন তখন উনার অ্যালবামের জন্য আমার মত অনেকেই অপেক্ষায় থাকতেন। হাবিব ভাইয়ের ‘বলছি তোমাকে’ অ্যালবামটি বের হওয়ার পর আমি মনে মনে প্রস্তুতি নিলাম যে হাবিব ভাইয়ের পরবর্তী অ্যালবামের গানগুলা হবে আমার লেখা। তাই প্রস্তুতি নিয়ে হাবিব ভাইয়ের অ্যালবামের জন্য পুরো ১১টি গান লিখেছিলাম। সেই অ্যালবামের নাম দিয়েছিলাম ‘স্বপ্নের আঙ্গিনায়’। আর আমাদের শহরের এক ক্যাসেটের দোকানে টাঙ্গানো অ্যালবামের পোষ্টার থেকে লেজার ভিশনের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম সেই ১১টি গান।
অপেক্ষায় ছিলাম,হয়তো কিছু একটা হবে। অনেক দিন পর আমার বড় ভাইয়ের মোবাইল নাম্বারে( সিটিসেল নাম্বারে) কল এসেছিল লেজার ভিশন থেকে। বড় ভাই বাইরে ছিল। তাই বাসায় আসার পর কল দিয়ে আমি উনাদের সাথে কথাও বলেছিলাম। উনারা তখন একটা কথা বলে শান্তনা দিল যে,এসব কিছু এভাবে হয়না। এনব করতে হলে ঢাকায় যেতে হয়। সব সময়ের একটা যোগাযোগের ব্যাপার আছে। তাছাড়া, ঐ ১১টি গান তারা যদি নিজের নামে চালিয়ে দেন তাহলে আমি কি করবো এভাবে বিভিন্ন বিষয় ভাল করে বুঝালেন। তারপর আমি কষ্টের মধ্যেও কিছুটা শান্তি পেয়েছিলাম এই ভেবে যে,আমার পাঠানো গান ঢাকায় পৌছেছিল। শান্তি ফেলেও,স্বস্থিটা যে আজও পাওয়া হয়নি। আজও আমি সেই একই আশায়, একই প্রত্যাশায়। একদিন আমার লেখা গানের অ্যালবাম বের হবে। সিনেমায় আমার লেখা গান প্রচারিত হবে। আমার লেখা গল্পে নাটক-সিনেমা হবে। লিখে রাখা থিম সং গুলো দিয়ে প্রত্যেকে নিজেদের টিভি ও বিজ্ঞাপনের গান তৈরি করবেন। হয়তো তাতেই আমার শান্তনা।
লেখক : কবি ও গীতিকার
পিবিএ/ এমএ