শতাব্দী আলম : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের আজ ২৬ জুন ২ বছর পূর্ণ হলো। শুরুতেই মেয়র মহোদয়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি আজ ২ বছর পূর্ণ করেছেন।
আগে পরে তিনি যেমন জনসাধারণকে অনেক আশা দিয়েছেন। জনসাধারণও তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিল। ২ বছর পর কোনপক্ষই চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলাতে পারছে না। আর কার্যকালে প্রথম ১০০ দিবসের কর্মসূচীর কোন হদিসই নেই। অথচ সরকারিভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে হাজার হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছেন। তারপরও সবদিকে কেবল হায় হায় কেন!
এর অন্যতম কারন সারাবিশ্ব যখন মহামারি করোনায় ব্যতিব্যস্ত তখনো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে লুটপাটের ভাগাভাগির প্রশ্নে একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান প্রকৌশলী হত্যাকান্ডের শিকার হন। একদিকে সিটির জনসাধারণের জীবন-মান সমস্যায় জর্জরিত অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া হাজারো কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে এমন লুটপাটের অভিযোগ। সব মিলে গাজীপুর বেশ আলোচনায় রয়েছে বটে। তবে তা ইতিবাচক না নেতিবাচক সেটি অনেক বড় প্রশ্ন!
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যার ঘটনায় দেশের সব মহলেই গাজীপুর সিটির ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গণমাধ্যমে (আমাদের সময় ১ জুন) মেয়রের সহচর মোঃ মনিরুল ইসলামের নাম উঠায় স্বাভাবিকভাবেই তার ভক্ত কর্মী-সমর্থকদের মাঝে হায় হায় রব উঠে। ইতিপূর্বেও এই মনিরের নামে সিটি কর্পোরেশনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তারপরও মেয়র তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় নেতাকর্মী ও গাজীপুরের জনসাধারণের মনে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। গণমাধ্যমে আসে মনিরকে প্রশাসন খোঁজছে। অপরদিকে মেয়র মনিরকে নিজ সরকারি গাড়িতে ঘুড়ায়। এই প্রশ্নের উত্তর জনসাধারণ বা নেতাকর্মীরা খোঁজে পাচ্ছে না।
যেহেতু গাজীপুর শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা। এখানে এমনিতেই সরকার বিশেষ বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়। তাছাড়া দুইজন কার্যকর মন্ত্রীও রয়েছেন। তারপরও সরকার সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমেই উন্নয়ন কাজের সিংহভাগ বাস্তবায়ন করে থাকে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও উন্নয়নের নামে ভুয়া কাজের বিল বানিয়ে লোপাটের অভিযোগ এখন গাজীপুরের মানুষের মুখে মুখে। যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন প্রকৌশলী খুন হলেন। কাগজে কলমে ২ বছর পার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাস্তবে সাধারণ মানুষের মনে নানান প্রশ্ন এবং এহেন কর্মকান্ডে হায় হায় আফসোস! এটা ঠিক ২ বছর খুব বেশী সময় না। তবে সরকারি বরাদ্দের খাত গুলোতে জনাসাধারণ কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পেলে এমন হায় হায় রব উঠতো না। তাছাড়া লুটপাটের যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রথম আলোর সাথে সাক্ষাৎকারে মেয়র নিজেও স্বীকার করেছেন(‘আনিছুর টঙ্গীতে দায়িত্ব পালন করার সময়ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফাপর দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা আদায় করেছেন’) । সেই অসাধু কর্মকর্তা সহকর্মীকে হত্যা করে জেলে গেছেন। জনসাধারণের প্রশ্ন এখন তিনি কেন এ কথা বলছেন। আরো আগে হলে হয়তো একটি পরিবার অনাথ হতে হতো না। একজন পরপারে, একজন জেলে আর যে মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তিনি কিন্তু মেয়রের সাথে সাথে ঘুরে বেরাচ্ছেন। এটা নিয়েই জনসাধারণের প্রশ্ন এবং হা হুতাশ।
এই করোনাকালে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিটির মেয়র হয়েও অনেকসময় সরকারের নীতি বুঝতে তিনি কিন্তু ভুল করেছেন। শুরুতেই তিনি সরকারি সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করেই চীন থেকে পরীক্ষা কিট এনেছেন। যে র্যাপিড টেষ্ট কিট এখনো সরকার অনুমোদন দেয়নি। এরপর স্বপ্রনোদিত হয়ে গাজীপুরে লকডাউন ঘোষণা করে দিলেন। সেদিন রাতেই আবার প্রত্যাহার করেন। সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়াই মসজিদ খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন। প্রয়াত ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর কথায় তা প্রত্যাহার করেন। তিনি একাধিক গণমাধ্যমে এবং টকশোতে গাজীপুরে কঠোর লকডাউন চেয়েছেন। অথচ সরকারের ভিন্ন মত। সরকার দেশের ১৫ জেলায় লকডাউন দিলেও গাজীপুরে দেয়নি। এসব কথার কারনে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং জনসাধারণের মাঝে মেয়রের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে অনেকের অভিমত।
সরকারের শত সাফল্যের মাঝে গাজীপুর সিটিতে উন্নয়ন বরাদ্দ নিয়ে খুনাখুনিতে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডও বিব্রত। তার উপর সরকারের নীতির বিপরীতে এসব কথা বলাতেও মেয়র বেকফুটে আছেন।
সাংগঠনিকভাবেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা খুব সুখে নেই। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এবং সভাপতি আজমত উল্লাহ খান। তাদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও এতদিনে মাত্র ১৫ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েছেন। টঙ্গী বা গাজীপুর সদর সিটির প্রাণকেন্দ্রের সব ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের কমিটি ঝুলে আছে। সবশেষ আওয়ামী লীগের থানা বা ওয়ার্ড কমিটি হয়েছিল দেড়যুগ পূর্বে। এ নিয়ে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগে নেতা কর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ এবং হাতাশা। নেতাকর্মীরা মুখে বলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে বা ঘরোয়া আলোচনায় এ নিয়ে বিস্তর বলাবলি করেও কোন সুরাহা পায়নি। আর এখনতো মহানগর কমিটিরই মেয়াদ শেষ।
যা হোক সামনে এখনো অফুরন্ত সময় রয়েছে। সরকারি বরাদ্দও হাতে আছে। আগামী দিনগুলোতে গাজীপুর সিটির জনসাধারণ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাঙ্খিত স্বপ্ন পুরণ হবে এই প্রত্যাশা।
পিবিএ/এমএ