পিবিএ,ঢাকা: গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহিদুল্লাহ ও তার স্ত্রী (পরিচালক) নিপা সুলতানাকে সোমবার আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা। ডিবি জানায়, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের শেয়ার কেনাবেচার ১০০ কোটি টাকার জমা ছিল। সেই টাকা আত্মসাতের টার্গেট ছিল তাদের। ১৮ কোটি টাকা তুলেও ফেলেছিল তারা। তবে এর আগেই ডিবির অভিযানে ধরা পড়ে।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে ডিবি কার্যালয়ের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এমডি ও তার স্ত্রী গত ২২ থেকে তার ক্রেস্ট সিকিউরিটিস স্টক ব্রোকারেজ হাউজটি বন্ধ করে চলে যায়। তার প্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ২২ হাজার বিও অ্যাকাউন্টধারীদের শেয়ারবাজারে শেয়ার কেনাবেচার ১০০ কোটি টাকা ছিল। শহিদুল্লাহ ২২ তারিখে তার প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৮ কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে শিফট করে প্রতারিত করার জন্য সরিয়ে নিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা যখন দেখলো যে অ্যাকাউন্টে টাকা নেই, তখন তারা অফিসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো। তখন দেখে অফিস তালা ও শহিদুল্লাহ, তার স্ত্রী ও ভাই পালিয়ে গেছে।
শহিদুল্লাহকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আবদুল বাতেন জানান, তিনি (শহিদুল্লাহ) স্বীকার করেছেন যে আত্মসাতের জন্যেই টাকা তুলে পালিয়েছিলেন। এছাড়াও আরেকটি অবৈধ কাজ করেছেন তারা। নিয়ম অনুযায়ী তারা শুধুমাত্র এই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট খুলে শেয়ার কেনাবেচা করতে পারবেন। তবে তারা প্রায় ৬০০ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর নিয়ে ডিডের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা নিয়ে তাদের মাসে মাসে লভ্যাংশ দিচ্ছেন, যেটা আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই টাকাটা মেরে দেয়ার জন্যই তিনি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চলে গেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ২২ হাজার বিও অ্যাকাউন্টধারীদের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ ও তার মধ্যে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানায় ডিবি।
এ ঘটনায় পল্টন থানায় ২টি মামলা রুজু হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ জুন বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দেয়ার পর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ক্রেস্টের বিনিয়োগকারীরা। তারা প্রতিষ্ঠানটির বাইরে বিক্ষোভ করেন। ২৪ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) দুই প্রতিনিধিসহ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এছাড়া হাউজটির মালিকরা যেনো বিদেশে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যে ডিএসই থেকে পল্টন থানায় অভিযোগ করা হয়। একই সঙ্গে মালিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করে। এখন তাদের ১০টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
এদিকে বন্ধ করার আগে ব্রোকারেজ হাউজটি থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়। তবে এর বিনিময়ে ডিএসইকে দেয়া চেক বাউন্স করে। ফলে হাউজটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ডিএসই। তাদের কাউকে না পেয়ে কেনা শেয়ারগুলো সাময়িকভাবে ফ্রিজ করে রাখে। পরবর্তীতে ওই শেয়ারগুলো বিক্রি করে পাওনা পরিশোধ করে ডিএসই।
সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার এএইচ এম আজিমুল হক, জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাদিয়া আফরোজসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পিবিএ/এসডি