পিবিএ,মনির হোসেন জীবন,ঢাকা: বেসরকারী রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম ও প্রতারণার ঘটনায় হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ এর অন্যতম সহযোগী তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর তেঁজগাও নাখাল পাড়া এলাকা থেকে গোপনে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র্যাব।
র্যাবের আইনও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক সুজয় সরকার আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে মো. সাহেদ এর অন্যতম সহযোগী তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাচাই করে বাকী আসামীদেরকে গ্রেফতারের বিষয়ে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, রিজেন্ট হাসপাতালের ঘটনায় ইতোপূর্বে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত গত সোমবার অভিযান চালিয়ে ৮জনকে গ্রেফতার করেছিল। তাদেরকে বুধবার উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ধৃত আসামীদেরকে আদালতে পাঠালে আদালত শুনানী শেষে এক আসামী ব্যতিত ৭জনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই (অপ্রাপ্ত) শিশু এক আসামীকে গাজীপুরের টঙ্গীস্থ শিশু সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এনিয়ে এখনও পর্যন্ত রিজেন্ট হাসপাতালে দুনীতি, অনিময়,জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্নসাৎ এর ঘটনায় মোট ৯জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ও তার পরিবারের সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব তলব এবং তা খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট)।
এছাড়া এঘটনায় বুধবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বরে সেকশনে রিজেন্ট হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
বুধবার দিবাগত রাতে সংস্থাটির প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী কোনও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রিপোর্ট থাকলে বা কারও ব্যাপারে তথ্যের দরকার হলে আমরা ব্যাংক হিসাব তলব করি। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিকের ব্যাংক হিসাবও আইন মেনে তলব করা হয়েছে।’ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্বাহী প্রধানদের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, গত মঙ্গলবার (৭ জুলাই) করোনাভাইরাসের সন্দেহভাজন নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং মেয়াদপূর্তির পরও লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করোনা ডেডিকেটেড বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এরপর ঘটনার দিন মঙ্গলবার ( ৭ জুলাই) মধ্য রাতেই রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করে এলিট ফোর্স র্যাব।যার মামলা নম্বর-৫।ধারা
দণ্ডবিধি ৪০৬/৪১৭/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/২৬৯ ধারায় প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। আটজনকে আটক করা হয়েছে। সাহেদসহ নয়জন পলাতক।পরবর্তীতে মামলার ৮জন আসামীকে বুধবার জিঞ্জাসাবাদের জন্য পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েআদালতে পাঠালে শুনানী শেষে আদালত আসামীদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন— হাসপাতালের অ্যাডমিন অফিসার আহসান হাবীব (৪৫), এক্সরে টেকনিশিয়ান হাসান (৪৯), মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হাকিম আলী (২৫), রিসিপশনিস্ট কামরুল ইসলাম (৩৫), রিজেন্ট গ্রুপের প্রজেক্ট অ্যাডমিন রাকিবুল ইসলাম (৩৯), রিজেন্ট গ্রুপের এইচআর অ্যাডমিন অমিত অনিক (৩৩), গাড়িচালক আব্দুস সালাম (২৫), এক্সিকিউটিভ অফিসার আব্দুর রশীদ খান জুয়েল (২৮),ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজ (৪০), হাসপাতাল কর্মচারী তরিকুল ইসলাম (৩৩), স্টাফ আব্দুর রশিদ খান (২৯), স্টাফ শিমুল পারভেজ (২৫), কর্মচারী দীপায়ন বসু (৩২) ও মাহবুব (৩৮)। অপর দু’জনের নাম জানা যায়নি।
এদিকে, উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা আজ গনমাধ্যমকে জানান, ‘করোনা টেস্ট না করে রোগীদের জাল রিপোর্ট দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। যার মামলা নম্বর হল-৫।
ওসি জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীরা এখন ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছেন। তাদেরকে ব্যাপক জিঞ্জাসাবাদ করা হবে।
পিবিএ/এসডি