পিবিএ,সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুুর পর থেকেই একটি অংশ নিজেদের অবস্থান জানান দিতে একের পর এক নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটায়। এর ফলে সিরাজগঞ্জের জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি এনামুল হক বিজয়ের হত্যার ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা ছাত্রলীগ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। এর মধ্যেই একটি পক্ষ নিজেদের অবস্থান জানান দিতে মিলাদ মাহফিলে হামলার ঘটনা ঘটায়। এর পর থেকেই শহরে উত্তপ্ত বিরাজ করায় জেলা প্রশাসকের অনুরোধে জেলা আওয়ামীলীগ সকল কার্যালয় স্থগিত করে দেওয়া হয়।
গত বুধবার শহরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
জেলার আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান কল্পে গত বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের যৌথ আহবানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহীদ সামসুদ্দিন সম্মেলন কক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে দলীয় একটি সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান, জেলার আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধানকল্পে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের যৌথ আহবানে এক জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সাময়িকভাবে দলীয় কার্যক্রম সীমিত করার অনুরোধ করা হয়। এরপর তাদের মধ্যে একমত হয়েই কার্যক্রম সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশেই আমাদের এমন উদ্যোগ নিতে হয়েছে। আমরা আওয়ামীলীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সংযত হওয়ার আহবান জানিয়েছি।
জেলা আওয়ামী লীগসহ সভাপতি আবু ইউসুফ সুর্য্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশাসনকে দিয়ে এটি বাস্তবায়ন করছেন। ১৯৭১ সালের পর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় বন্ধের ঘটনা এটিই প্রথম উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে ৭/৮টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে যার বিচার না হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জেলা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে প্রশাসনকে দিয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এতে করে বোঝা যায় জেলা কমিটির ওপর কেন্দ্রের কোনো আস্থা নেই।
রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন জানান, ‘আমরা দুই পক্ষকেই শান্তিবজায় রাখার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। যারাই সহিংসতা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।’
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার প্রসঙ্গে এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘করোনার মধ্যে দলীয় কার্যালয়ে কী কাজ? আমরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই তো সীমিত পরিসরে কাজ করছি। এখন তো সভা সমাবেশ করার সময় নয়। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সময়। সেজন্য তাদের দলীয় কার্যালয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিরাজগঞ্জে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনে দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া প্রশাসনকে শহরের সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা স্বীকার না করলেও বুধবার রাতে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পিবিএ/সোহাগ লুৎফুল কবির/এসডি