পিবিএ,সিরাজগঞ্জ: মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে তার নির্বাচনী আসনে (সিরাজগঞ্জ-১)শূন্য ঘোষণা করা হলে তার সুযোগ্য সন্তান সাবেক সাংসদ জয় নৌকার মাঝি তৃণমূল পর্যায়ে এমন আলোচনা উঠলেও দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এখনও কোন আলোচনা নেই। তবে দলের শীর্ষনেতারা বলছেন, মোহাম্মদ নাসিমের অনুপস্থিতিতে তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়ই হতে পারেন যোগ্য উত্তরসূরি।
উল্লেখ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ নাসিম গত ১৩ জুন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি শূন্য হয়।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে এর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ভোটের আয়োজন করতে হবে।
মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসন (কাজীপুর ও সদর উপজেলার একাংশ) থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের হুইপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং সর্বশেষ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা গেছে, নাসিমের শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলের নেতাকর্মীরা। সেজন্য তার শূন্য আসন নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। তবে যেহেতু নির্বাচন করতে হবে এবং মোহাম্মদ নাসিমের শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। তাই নির্বাচনী তফষিল ঘোষণার পরই এই বিষয়ে বসবেন দলের নীতি নির্ধারকরা। সেক্ষেত্রে তার ছেলে সাবেক সাংসদ তানভীর শাকিল জয় মোহাম্মদ নাসিমের উত্তরসূরি হিসেবে নৌকার মাঝি হবেন।
২০০৮ সালে এক-এগারোর সরকারের দেওয়া মামলার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি মোহাম্মদ নাসিম। পরে তার সন্তান প্রকৌশলী তানভির শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন জয়। এছাড়া সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মোহাম্মদ নাসিমের পরে আওয়ামীলীগে তানভীর শাকিল জয়ের বিকল্প কেও নেই। এজন্য তার ওপর এবারও আস্থা রাখতে পারে দল। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
পৌর মেয়র ও কাজীপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী মো. নিজামউদ্দিন বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে নাসিম ভাইয়ের পরিবারের বিকল্প নেই। তিনিও যখন নির্বাচন করেছেন তখনও কেউ তার প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলো না। নাসিম ভাইয়ের অসুস্থতার পর তার নির্দেশে জয়ই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখাশোনা করেছেন।’
তানভীর শাকিল জয় বলেন, ‘এলাকার মানুষের জন্য কাজ করা আমাদের পরিবারের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা আছে। সাংসদ না হলেও সেই দায়িত্ব পালন করে যাবো।’
বাবার রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে এক-এগারোর সরকার বাবাকে নির্বাচন করতে দেয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি নির্বাচন করি। সেই সুযোগে পাঁচ বছর সংসদ সদস্য ছিলাম। রাজনীতিতে তখন অভিজ্ঞতা না থাকলেও বাবার পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় মানুষের জন্য কাজ করেছি। শেষ বয়সে অসুস্থ হয়েও বাবা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কারণে অনেক সময় এলাকায় বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি। তখন তাকে সহায়তা করেছি, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।’
এলাকার মানুষের জন্য তার পরিবারের দায়বদ্ধতার কথা জানিয়ে জয় বলেন, ‘বাবা মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। করোনা ঝুঁকির মধ্যেও তিনি এলাকায় দুই বার ত্রাণ দিয়েছেন। তার মতো চেষ্টা করবো মানুষের জন্য কাজ করতে। আমার পরিবার সবসময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু করেছে। তিনি যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন এবং সুযোগ দেন তাহলে আমি বাবা ও দাদার (ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী) মতো নৌকাকে বিজয়ী করে মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।’
তানভীর শাকিল জয় ১ আগস্ট ১৯৭৪ সালের সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করে আমেরিকার ভার্জিনিয়ার জর্জ ম্যাশন ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি সদস্য এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পিবিএ/সোহগ লুৎফুল কবির/এসডি